Murshidabad Murder: সহযাত্রীকে সাহায্যের 'অপরাধ'-এ ধাক্কা যুবককে, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু

ট্রেনের মধ্যে নাজিমের পাশে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। এদিকে ট্রেনের মধ্যে হঠাৎই ওই বৃদ্ধের টাকার ব্যাগ হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজার পরও তার কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। তখন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বৃদ্ধকে দেখে খুবই মায়া হয় নাজিমের। 

Web Desk - ANB | Published : Dec 14, 2021 5:45 PM IST / Updated: Dec 14 2021, 11:17 PM IST

চরম মর্মান্তিক! সহযাত্রীর (Train Passenger) হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ (Bag) খুঁজে দিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর 'অপরাধ'। তার জেরেই চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হল এক যুবককে। টেনে হিঁচড়ে যুবককে ট্রেন (Train) থেকে প্ল্যাটফর্মে (Platform) নামিয়ে চলন্ত ট্রেনের মাঝে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বেগুনবাড়ি এলাকায়। মৃত যুবকের নাম নাজিম উদ্দিন শেখ (২১)। রেল পুলিশের (Rail Police) তরফে এই ঘটনার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে ছিলেন নাজিম। লকডাউনের সময় পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেরিয়ে পড়েছিলেন কাজের খোঁজে। সংসারের হাল ধরতে গাড়ি চালানো শিখেছিলেন তিনি। এরপর এক ব্যক্তির কাছে গাড়ি ড্রাইভার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কয়েকদিন আগেই গ্রামের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেখান থেকেই ফিরছিলেন। শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে মুর্শিদাবাদে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। মঙ্গলবার শিয়ালদা থেকে ট্রেনে চড়েন। কিন্তু, অন্য কামরায় ভিড় থাকায় ভেন্ডারে উঠেছিলেন তিনি। ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই। 

ট্রেনের মধ্যে নাজিমের পাশে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। এদিকে ট্রেনের মধ্যে হঠাৎই ওই বৃদ্ধের টাকার ব্যাগ হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজার পরও তার কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। তখন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বৃদ্ধকে দেখে খুবই মায়া হয় নাজিমের। বৃদ্ধের ওই করুণ অবস্থা দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ট্রেনের মধ্যে বৃদ্ধের ব্যাগ খোঁজা শুরু করেন। অনেক খোঁজা খুঁজির পর ভেন্ডারে থাকা এক দুধ বিক্রেতার ড্রামের মধ্যে থেকে বৃদ্ধের ব্যাগটি খুঁজে পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধকে তা ফিরিয়ে দেন নাজিম। তাঁর এই সাহায্যে খুবই খুশি হন বৃদ্ধ। নাজিমকে তিনি ধন্যবাদ জানান।   

এদিকে নাজিমের এই কাজ একেবারেই মেনে নিতে পারেনি অভিযুক্ত দুধ বিক্রেতা ও তাঁর অন্য সঙ্গীরা। ট্রেনের মধ্যেই নাজিমের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় তাঁদের। অভিযোগ, এরপর ট্রেন থেকেই নিজের সঙ্গীদের ফোন করেন অভিযোগ। তাঁদের পরবর্তী স্টেশনে আসার জন্য ডেকে পাঠান। কিছুক্ষণ পরই দুধ বিক্রেতা ও তাঁদের সহযোগীরা দলবল নিয়ে মুর্শিদাবাদ ঢোকার আগের স্টেশনে এসে হাজির হয়। এরপর টেনে-হিঁচড়ে ভেন্ডার থেকে স্টেশনে নামানো হয় নাজিমকে। সেখানেও তাঁদের সঙ্গে নাজিমের বচসা শুরু হয়। তারপরই রাগের মাথায় নাজিমকে প্ল্যাটফর্ম থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় চলন্ত ট্রেনের মাঝে। তখনই চলন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় নাজিমের। 

ঘটনার খবর পৌঁছায় নাজিমের বাড়িতে। খবর পাওয়ার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এরপর এই ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে রেল পুলিশের দ্বারস্থ হয় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের দাবি, অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে রেল পুলিশ। এরপর স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তারপর বেলডাঙার দুই বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য আতিবুর রহমান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কারও দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পর যে এই চরম পরিণতি হতে পারে ভেবেই অবাক স্থানীয়রা। 

Share this article
click me!