Maoist Poster: প্রস্তাবিত কয়লাখনিতে মাওবাদী পোষ্টার, গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য

দিন দুয়েক আগে হাতে ব্যানার ছাড়াই গ্রামে মিছিল করেছিল তৃণমূল। মহিলারা হাতে ঝাঁটা, লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল রুখে দিয়েছিল।

Parna Sengupta | Published : Dec 26, 2021 1:55 PM IST

দেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লাখনি (deucha panchami coal mine) গড়া নিয়ে আদিবাসীদের (Adivasi) আন্দোলনের পাশে দাঁড়াল মাওবাদী সংগঠন (Maoist Group) সিপিআই মাওবাদী (CPI-Maoist)। ইতিমধ্যে তারা এলাকার হরিণসিংহা গ্রামের দেওয়ালে পোষ্টার সাঁটিয়ে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। পোষ্টারকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

বীরভূমের মহম্মদবাজার থানা এলাকায় দেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লাখনি চালুর বিষয়ে সরকারের প্যাকেজ ঘোষণার পরেই শুরু হয়েছে আদিবাসী আন্দোলন। সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে সেভ ডেমোক্রেসি সহ একাধিক রাজনৈতিক সংগঠন। দিন দুয়েক আগে হাতে ব্যানার ছাড়াই গ্রামে মিছিল করেছিল তৃণমূল। মহিলারা হাতে ঝাঁটা, লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল রুখে দিয়েছিল। কয়েকজন তৃণমূল কর্মী সমর্থককে হেনস্থাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূলের মিছিলে হামলা চালানোর অপরাধে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ রাতের বেলা গ্রামে গিয়ে মহিলাদের নির্বিচারে মারধর করে বলে অভিযোগ।

পুলিশের মারে ২০ জনেরও বেশি মহিলা আহত হন। তাদের মল্লারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়েছে। এরপরেই শনিবার মাওবাদী পোষ্টার মেলে হরিণসিংহা গ্রামে। সাদা কাগজে লালাকালিতে হিন্দিতে লেখা ‘হাম লোগ আপ কে সাথ হ্যায়। সিপিআই (মাওবাদী)’ পোষ্টার ঘিরসাসনের। ঘুম ছুটেছে পুলিশ প্রশাসনের। 

জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “আমরা তদন্ত করছি। তবে ওই পোষ্টার সাঁটানোর পিছনে স্থানীয়দের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমরা ঝাড়খণ্ডের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা পোষ্টারের রহস্য উদ্ঘাটন করব”।

আদিবাসী নেতা সুনীল মুর্মু বলেন, “আমাদের জনজাতি আদিবাসী ভূমিরক্ষা কমিটি ওই পোষ্টারকে সমর্থন করে না। কারা ওই পোষ্টার মেরেছে আমরা বলতে পারব না। আমাদের মনে হচ্ছে এই সমস্ত পোষ্টার মেরে শাসক দল রাজনৈতিক চক্রান্ত করে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে রুখতে চাইছে। আমরা কোন প্ররোচনায় পা দেব না। আমরা কয়লাখনি চাই না। মাতৃভূমি ছাড়ব না। যতই মামলা দেওয়া হোক কিংবা পুলিশ দিয়ে মারধর করা হোক আন্দোলন আমাদের জারি থাকবে”।

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই জায়গাটা আদিবাসী অধ্যুষিত। তাই পড়শি রাজ্যে ঝাড়খণ্ডের কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে ওই পোষ্টার সাঁটিয়েছে। মাওবাদীর কোন গল্প নেই। আমরা ওই পোষ্টারকে গুরুত্ব দিচ্ছি না”।

উল্লেখ্য, স্থানীয় জেলা শাসক বিধান রায় বলেছিলেন, “এই প্রকল্পের মোট খাস জমির পরিমাণ ৫৯৬.০২ একর। বিভিন্ন সরকারি দফতরের জমি ৭২.৯২ একর। বনভূমি ৩০৯.৭০ একর। ব্যক্তি মালিকানাধীন রায়তি জমি ২৩৯২.১৩ একর। মোট ৩৩৭০.৭৭ একর জমির উপর কয়লাখনি করা হবে। বনভূমি ধ্বংস এবং খাস জমিতে যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যত গুলি গাছ কাটা হবে তার দ্বিগুণ গাছ লাগানো হবে। ১৫ টি পরিবার খাস জমিতে বসবাস করছেন। তাদের তিন মাস পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। অন্যত্র যাওয়ার জন্য দশ হাজার টাকা, বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি, জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবার পিছু এক বছর দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

২৮৫ জন ক্রাসার মালিকদের ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা করে কাঠা প্রতি পাবেন। এছাড়াও অন্যান সুবিধা রয়েছে। তিন হাজার পাথর খাদান ও ক্রাসার শ্রমিকদের এক্কালিন ৫০ হাজার টাকা ভাতা এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা করে এক বছর দেওয়া হবে”। জেলা শাসকের কথায়, সরকার সবার জন্য ভালো প্যাকেজ করেছে। এনিয়ে আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বৈঠক করব। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি যাব। এই কয়লা খনি সরকারের একটা স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না”। কিন্তুর সরকারের এই প্রস্তাব বর্তমানে নাকচ করে দিয়েছেন আদিবাসীরা। তাঁরা ভূমি আর জঙ্গলের অধিকার ছাড়তে নারাজ। 

Share this article
click me!