প্রসঙ্গে গ্রামেরই এক বাসিন্দা সাজিনা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ সেদিন সব বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছে সকলকে। লুঠ করা হয়েছে সমস্ত টাকাপয়সা।’
কোনও সাধারণ অগ্নিকাণ্ড নয়, যেন কার্যত অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়েছিল গোটা গ্রাম। গত সোমবার বিকাল থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম(village of Rampurhat) জুড়ে। উপপ্রধান ভাদু শেখের মৃত্যুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই জ্বলে ওঠে ওই গ্রাম। উপপ্রধানের মৃত্যুর পরই গ্রামের কিছু বাড়িতে হটাৎই আগুন লেগে যায়। দমকলের ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর সকল চেষ্টা করলেও লাভের লাভ বলতে কিছুই হয়নি। মৃত্যু হয় মহিলা-শিশু-সহ ৮ জনের।
উপপ্রধানের মৃত্যুর পর এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড শিউরে দিয়েছে সেখানকার সাধারণ মানুষদের। গত গ্রাম জুড়ে পোড়া গন্ধ যেন প্রতি মুহূর্তে ভয় দেখাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। ইতিমধ্যে, গ্রামে ছেড়ে পালানোর একাধিক খবর উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমের সামনে। অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে অনেক বড় ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। অগ্নিকান্ড নয়, গণহত্যা বলেই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। এদিনের এই ঘটনার প্রসঙ্গে গ্রামেরই এক বাসিন্দা সাজিনা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ সেদিন সব বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছে সকলকে। লুঠ করা হয়েছে সমস্ত টাকাপয়সা।’
এদিন ভয়ার্ত গলায় নিজের গ্রাম জুড়ে হওয়া গণহত্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘সেই দিন আমার বাবা আমায় ফোন করে সকল ঘটনা জানায়।’ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই অভিযোগ করেন তিনি। ষড়যন্ত্রের জেরে আজকে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে রয়েছেন তাঁর মা, এমনটাই অভিযোগ সাজিনার। কাঁদো কাঁদো গলায় এদিন সাজিনা জানান, ‘আমার বাবার কাছ থেকে বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাই। কীভাবে তাদের কাছে আসব বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে পুলিশের গাড়ি করে এখানে আসি। বাবা জানায়, মা-কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে রীতিমতো পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে তাকে।’
আরও পড়ুন- ‘গ্রেফতার করলে দোষী হয় না, আদালতে প্রমান করতে হয়’, অভিষেক ইস্যুতে ফের সরব কুণাল
শুধুই মা নয় তাঁর কাকিমা ও পরিবারের আরও কিছু সদস্যকে ইতিমধ্যে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চলছে মরণ-বাঁচন লড়াই। প্রসঙ্গত, সরকারি মতে মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব থাকলেও গ্রামবাসীদের কথায় উঠে আসছে অন্য তথ্য। সাজিনার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই বাড়ি থেকে মৃত্যু হয়েছে মোট ১১ জনের। কাঁদো কাঁদো গলায় নিজের পরিবারের সকল সদস্যদের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন সাজিনা। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কে রয়েছেন? কেনই বা খুন করা হল এত জনকে? – এই সকল প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। পুলিশে ডিজি মনোজ মালব্যের মতে, ব্যাক্তিগত শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এই প্রসঙ্গে অবশ্য সাজিনার অভিযোগ, ‘ভাদু শেখকে খুন করা হয়েছে বলেই এই প্রকার ঘটনা ঘটেছে গ্রাম জুড়ে। গোটা গ্রাম জুড়ে তান্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতিরা। আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সব টাকা পয়সা লুঠ করা হয়েছে।’