কোভিড আতঙ্কের মধ্যেই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বহু পরিযায়ী শ্রমিকও এই ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু এদের সকলেরই চোখে মুখে আতঙ্ক। রেল সূত্রে খবর যে অধিকাংশ মৃত এবং আহতরা পরিযায়ী শ্রমিক। স্বাভাবিকভাবেই এমন এক দুর্ঘটনায় এদের পরিবারগুলি এখন দেশাহারা। শোকে বাকরুদ্ধ।
চারিদিকে এলোমেলো চেহারা। হঠাৎ করে কেউ যদি দেখে তাহলে মনে হবে হয় এখানে কোনও মেলা বসেছিল অথবা এখানে দক্ষ-যঞ্জ চলেছে কোনও ভারী জিনিসের। আর এহেন পরিস্থিতিতে দৈত্যাকার লোহার ভারী ট্রেন কামরাগুলো যেন এলাকায় একটা আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ময়নাগুড়ির দোমোহনী-র মানুষও এই ছবিটা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সহ্য করতে পারছেন না। এই অঞ্চলটা অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের রেলপথের অন্যতম যোগাযোগ রুট। এত বছর ধরে এখান দিয়ে ট্রেন ছুটছে। কিন্তু কোনও দিন-ই এমন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়নি এখানকার মানুষ। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন বিকট আওয়াজ করে হাওড়া-গুয়াহাটি-বিকানের এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা লাইনচ্যূত হয় এবং একে অন্য কামরার ঘাড়ে চেপে বসে তা দেখে কার্যত হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিল স্থানীয় মানুষ। ঘটনার আকস্মিকতা ও বিহ্বলতা কাটিয়ে স্থানীয়রা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁরা।
ট্রেনের কামরায় ফেরি করছিলেন অনেকে। এদের মধ্যে অনেকে আবার ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। জিনিসপত্র নিয়ে এদের অনেকেই রেললাইনের উপরে পড়ে গিয়েছিলেন। মাথায়-ঘাড়ে-শরীরজুড়ে আঘাতে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় রেল লাইনের উপরেই পড়েছিলেন এরা। স্থানীয়রা এদের একে একে টেনে দুর্ঘটনার ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে। চ্যাংদোলা করে টেনে নিয়ে যায় ময়নাগুড়ি হাসপাতালে। উদ্ধারবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও স্থানীয়রা সরে যাননি। কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই স্থানীয় যুবক-তরুণরা ঝুলতে থাকা ট্রেনের কামরা চেপে বসেন। দমকল বাহিনীর সহায়তায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরার জানলা কেটে অনেককে জীবীত এবং মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মতেও যে এই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা অনেকটা কমানো গিয়েছে এবং আহতদেরও সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা সম্ভব হয়েছে।