'দিদিকে বলো' মোটের ওপর নির্বিঘ্নে কাটলেও 'বাংলার গর্ব মমতা'কে ঘিরে চলছে একের-পর-এক ঝঞ্ঝাট। কর্মসূচির শুরুর দিনেই শাসকদলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কার্যত চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছিল। তারপরও খুব-একটা নির্ঝঞ্ঝাট কাটেনি এই কর্মসূচি। শনিবার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী কার্যত 'বাংলার গর্ব মমতা' কর্মসূচিকে সামনে রেখেই ক্ষোভ উগরে দিলেন স্বয়ং মুখ্য়মন্ত্রীর বিরুদ্ধে! সেইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিলেন, অবস্থার পরিবর্তন না-হলে তিনি রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবেন!
গত ৩ মার্চ জেলা সফরে এসে মুখ্য়মন্ত্রী দরাজ হাতে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে। আর তাতেই বেজায় চটেছেন এই বিধায়ক। তাঁর কথায়, "মুখ্য়মন্ত্রীর উচিত ছিল ওই মিটিংয়ে উপস্থিত দলীয় বিধায়কদের কাছে সঠিক তথ্য়টা জেনে নেওয়া। অথচ, আমি যখন বলতে গেলাম, আমাকে থামিয়ে দেওয়া হল।" মুখ্য়মন্ত্রী যে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, তাঁদের রীতিমতো 'অপদার্থ' বলে অভিহিত করলেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক।
তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, "জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার দুজনেই অপদার্থ। সেদিন ওঁরা মুখ্য়মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছিলেন ( আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে)। আর মুখ্য়মন্ত্রী দলীয় বিধায়ক বা নেতৃত্বের কথা না-শুনেই আমলাদের কথাকেই বিশ্বাসযোগ্য় বলে মনে করেছেন। এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না।" তাহলে তিনি কেন বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেননি মুখ্য়মন্ত্রীকে? উত্তরে ইসলামপুরের বিধায়ক বলেন, "আমি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমান ধরার তাড়া আছে বলে আমাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।"
বিধায়কের কথায়, জেলায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিন-কে-দিন। পাশাপাশি জেলায় উন্নয়নের কাজও হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের বলার সুযোগ না দেওয়ার পরেও তিনি ওই মিটিংয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েকটি অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেন বিধায়ক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নাকি তাঁকে সময় দেননি। তাঁকে আসল পরিস্থিতি জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিমান ধরার তাড়া আছে বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে দেন বলে তাঁর ক্ষোভ। এদিন সাংবাদিকদের সামনে কোনও রাখঢাক না-করেই তিনি বলেন, "আমি মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছি, এরপর থেকে জেলার বিধায়ক ও নেতৃত্বের সাথে কথা না বলে আর তাঁদের থেকে বাস্তব পরিস্থিতি না জেনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের প্রশংসা করে দরাজ সার্টিফিকেট দেবেন না।"
জেলাশাসকের বিরুদ্ধে আব্দুল করিম চৌধুরীর অভিযোগ, "গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ইসলামপুরের নয়াবস্তি এলাকায় একটি চা বাগানের দখলকে কেন্দ্র করে একদল দুষ্কৃতী নিরীহ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। গুলিতে স্থানীয় এক মহিলার মৃত্যু হয়।দূষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমি দাবি জানাই। আমি ওই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিই। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য আমি উত্তরবঙ্গের আইজিকে আসতে অনুরোধ জানাই। তিনি পরদিন তদন্ত করতে আসেন। আমি জেলাশাসককেও ওইদিন মিটিংয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাই। কিন্তু জেলাশাসক তো ওই মিটিংয়ে আসেনইনি। উল্টে আমাকে বলেছেন, এটা আমাদের দলের ভেতরকার সমস্যা। আমাদেরই মিটিয়ে নিতে হবে।জেলাশাসক না আসার জন্য ওই মিটিং না-করেই আইজিকে ফিরে যেতে হয়েছে।"
আর পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিধায়কের অভিযোগ, "ইসলামপুরের এক ব্যক্তির মেয়েকে বিহারে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।ওই ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশ সুপার দেখা করার সময় পর্যন্ত পাননি। প্রতিদিন জেলায় অপরাধ ঘটছে।এইসব তথ্য গোপন করে প্রশাসনিক মিটিংয়ে তাঁরা ভুল তথ্য পরিবেশন করে বাহবা কুড়োচ্ছেন।"
এরপর তাঁর সংযোজন, "আমার সমস্যা, আমি রাজ্য সরকারের একজন বিধায়ক। প্রশাসনের এতো অন্যায় দেখেও আমি আন্দোলন করতে পারছি না। রাস্তা অবরোধ করতে পারছি না, থানা ও প্রশাসনের দপ্তর ঘেরাও করতে পারছি না।কিন্তু আমি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। তাঁদের প্রতি আমি ক্রমাগত অন্যায় করতে পারি না।সেই কারনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি গোটা বিষয়টি বিধানসভায় তোলার পাশাপাশি এই ব্যাপারে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবো। "
আব্দুল করিম চৌধুরীর এই বিস্ফোরক অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল অবশ্য় বলেছেন, "বিধায়কদের থেকে শুনে মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও আধিকারিককে ক্লিনচিট দিতে হবে , এমনটা আমি মনে করি না। তবে এদিন বিধায়ক যা বলেছেন, তা আমি দলের উর্দ্ধতন নেতৃত্বকে জানাবো।"