রাজনৈতিক হিংসায় প্রবল উত্তেজনা ছড়াল উত্তর চব্বিশ পরগণার ভাটপাড়ায়। যে গণ্ডদোল ছড়িয়ে পড়েছে শ্যামনগর, জগদ্দল, নৈহাটির মতো এলাকায়। রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে বুধবার সকাল থেকে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির জেরে ভাটপাড়া, জগদ্দল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।
এ দিন ভাটপাড়ায় নতুন থানার উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এ দিন সকাল থেকে বোমা- গুলির লড়াইতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা ভাটপাড়া। গোটা এলাকায় চলতে থাকে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। সংখ্যায় কম থাকায় প্রথমে পিছু হঠতে থাকে পুলিশ। পরে পুলিশ পৌঁছলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রামবাবু সাউ এবং সন্তোষ সাউ নামে এক যুবক এবং এক কিশোরের মৃত্যু হয়। বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। পরে ধরমবীর সিংহ নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। বেলার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে নবান্নও। স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপুন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সমাজবিরোধী এবং বহিরাগতরা এসে ভাটপাড়ায় অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সঞ্জয় সিংহকে বিশেষ দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে ভাটপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে এ দিন বিকেল ভাটপাড়া থানায় যান ডিজি বীরেন্দ্র এবং এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সঞ্জয় সিংহ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। ভাটপাড়া থানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও এ দিন থেকেই কাজ শুরু করে দেয় ওই থানা। তবে ভাটপাড়ার পরিস্থিতির দিন দিন যেভাবে অবনতি হচ্ছে, তাতে রাজ্য প্রশসানের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে।
ভাটপাড়ায় অশান্তিতে মৃতরা প্রত্যেকেই তাঁদের দলের সমর্থক বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তাঁর অভিযোগ, ব্যারাকপুরে বিজেপি-র জয়কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নিতে পারছেন না। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের সাহায্যে বার বার ভাটপাড়াকে অশান্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুকুল রায়। পুলিশের গুলিতেই ভাটপাড়ায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতা।
পাল্টা তৃণমূল নেতা এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে ভাটপাড়ায় অশান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপি। তাঁর পাল্টা দাবি, এলাকার অধিকাংশ তৃণমূল কর্মী ঘরছাড়া। যাঁরা এ দিন ভাটপাড়ায় নিহত হয়েছেন, তাঁরাও তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী। পুলিশ, প্রশাসন যথেষ্ট ভাল কাজ করছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। পুলিশের গুলিতে কারো মৃত্যু হয়নি বলেও দাবি তাঁর। নতুন এবং পুরনো বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই ভাটপাড়া, জগদ্দলে অশান্তি হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।