ধৃত সিরিয়াল কিলার কামরুজ্জামান সরকারকে নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই তাঁর করা খুনের ঘটনাগুলির পুনর্নির্মাণ শুরু করল পুলিশ। এ দিন সকালে কালনা থানা থেকে কামরুজ্জামানকে নিয়ে যাওয়া হয় কালার গোয়ারা মল্লিকপাড়ায়। গত ২২ মে এখানে খুন হয়েছিলেন এক মহিলা। পুলিশি জেরায় কামরুজ্জামান স্বীকার করে, ওই মহিলাকেও সেই খুন করেছিল।
বিশেষ নিরাপত্তার ঘেরাটোপে পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে নিজেই রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে গোয়ারাপাড়ার ওই ঘটনাস্থলে পুলিশকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার গ্রেফতারির পর থেকেই একেবারে নিরুত্তাপ রয়েছে সে। রাতে খাবার খেয়ে দিব্যি থানার লক আপের মধ্যেই ঘুমিয়েছে। সকালে উঠে চা, বিস্কুটও খায়। তার পরে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশ।
সেখানে গিয়ে সে মোটর বাইকে করে কোন রাস্তা দিয়ে আসে, কোথায় বাইকটি রাখে, এই সমস্ত কিছুই পুলিশকে বর্ণনা দেয় কামরুজ্জামান। সে জানায়, ঘরে ঢোকার আগে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে সে অপেক্ষা করছিল। ইলেকট্রিক মিটার দেখার নাম করে ওই বাড়িতে ঢোকে সে। তার পর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে খুন করে ওই মহিলাকে। কাজ হাসিলের পরে এর পরেই বাইকে চেপে চম্পট দেয়। ঘটনাস্থলে পুনর্নির্মাণের করে থানায় ফেরার পথে গোয়ারাপাড়ার মোড়ে পুলিশের গাড়ি থামাতে বলে কামরুজ্জামান। সেখানে একটি হার্ডওয়ারের দোকানে সে নিয়ে যায় পুলিশকে। কামরুজ্জামান জানায়, এই দোকান থেকেই সে চেন এবং রড কিনে নিয়ে গিয়েছিল ওই মহিলাকে খুন করার জন্য। পুলিশ জানতে পারে এই দোকান থেকে এর আগে বেশ কয়েকবার লোহার রড এবং চেন কিনেছিল ওই সিরিয়াল কিলার। ওই দোকানের মালিকও স্বীকার করেছেন, সত্যিই কামরুজ্জামান একাধিক বার তাঁর দোকানে চেন কিনতে এসেছিল।
মোট সাতটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর আরো যে কয়েকজন খুন হয়েছেন, সেই ঘটনাস্থলগুলিতে নিয়ে গিয়ে কামরুজ্জামানকে দিয়ে ঘটনার একই কায়দায় পুনর্নির্মাণ করানো হবে। পুলিশ সেক্ষেত্রে অপরাধ দমন শাখার সাহায্য নিতে পারে।
অন্য দিকে পুলিশ সূত্রে আরও বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগে কালনার উপলতি এলাকায় একটি বাড়িতে এক মহিলার উপর কামরুজ্জামান আক্রমণ চালালেও কোনভাবে ওই মহিলা বেঁচে যান। সেখানে হেলমেট এবং চেন ফেলে পালিয়ে যায় কামরুজ্জামান। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারে ওই সিরিয়াল কিলার লাল রংয়ের বাইক হেলমেট ব্যবহার করে। যদিও এই হেলমেট ফেলে আসার পর আবার সেই লাল রঙেরই আরো একটি হেলমেট কিনে নেয় ওই সিরিয়াল কিলার। পুলিশি জেরায় সে জানায়, লাল রং তার কাছে 'লাকি'। তাই বরাবরই লাল রঙের হেলমেট ও বাইক সে ব্যবহার করত সে।
হুগলি এবং বর্ধমানে মোট সাত মহিলাকে খুনের অভিযোগে সোমবার কামরুজ্জামান সরকার নামে ওই সিরিয়াল কিলারকে ধরে পুলিশ। পুলিশি জেরায় সে স্বীকার করে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে খুনের পরে মহিলাদের মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে সে। এমন কী, মৃত মহিলাদের গোপনাঙ্গও ক্ষতবিক্ষত করে দিত সে।
ধরা পড়ার পরও একেবারেই স্বাভাবিক ছিল কামরুলজ্জামান। অন্যান্য কয়েদিদের সঙ্গে গল্প করে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটায়। রাতে ডাল, ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে চা বিস্কুট খায়।
তার বিকৃত কামের যে পরিচয় পুলিশ পেয়েছে, সেই তথ্য দিয়ে তার মানসিক বিকারের শিকড়ে পৌঁছতে মনস্তত্ত্ববিদের সাহায্য নিতে পারে পুলিশ। এছাড়া প্রণয় ঘটিত কারণে কোনও মহিলার কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে সে এই ধরনের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করত কি না, তাও জানার জন্য মনোতস্তত্ত্ববিদের সাহায্য নেবে পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমদিকে লুঠ করার উদ্দেশ্যেই বাড়িতে মহিলাদের একা থাকার সুযোগে তাঁকে খুন করে গয়না লুঠপাট করত সে। কিন্তু পরবর্তীকালে মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টাও সে করত বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে ওই সিরিয়াল কিলার। খুনের জন্য প্রথমে লোহার চেন ব্যবহার করত কামরুজ্জামান। তবে কয়েকটি খুনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তীকালে লোহার রডও ব্যবহার করতে শরু করে সে।
রবিবার মেমারির দেবীপুর এলাকায় এক মহিলাকে খুন করার উদ্দেশে বের হয়েছিল। যদিও সিভিক ভলেন্টিয়াররা ছবি দেখে তাকে ধরে ফেলেন। সিরিয়াল কিলার ধরা পড়ায় গোটা কালনা এলাকাতেই যেন স্বস্তির ছায়া।