জামাই ষষ্ঠী বলে কথা। তাই সকাল থেকেই নবদ্বীপে মহাপ্রভু মন্দিরে ব্যস্ততা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। কারণ চৈতন্যদেবের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর পরিবারের সদস্যরা এই দিনটিতে জামাই রূপেই মহাপ্রভুর বিশেষ পুজোর করেন। নতুন ধুতি পাঞ্জাবি পরানো থেকে থেকে শুরু করে চৈতন্যদেবের প্রিয় আম ক্ষীরের পদ তৈরি, সবই শুরু হয়ে যায় ভোর থেকেই।
সারাবছর শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য রূপে পুজো করা হলেও জামাই ষষ্ঠীর দিন তিনি হয়ে ওঠেন আদরের জামাই। নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরের সেবায়েতরা ঘরের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর স্বামী হিসাবে তাঁকে ঘিরে এ দিন অন্যরকম উৎসবে মেতে ওঠেন। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভাই মাধবাচার্যের উত্তরপুরুষরাই প্রতি বছর এই রীতি পালন করেন।
জামাইষষ্ঠীর ভোর থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জামাই হিসাবে বরণ করা হয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে। প্রথমে নতুন ধুতি পাঞ্জাবিতে সাজানো হয় তাঁকে। পরানো হয় রজনীগন্ধা এবং গোলাপের মালা, গায়ে ছিঁটিয়ে দেওয়া হয় সুগন্ধী। মহাপ্রভুকে নিজের সন্তানতুল্য মনে করে ষাটের বাতাস দেন গোস্বামী পরিবারের মহিলারা। যা দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করেন মহাপ্রভু মন্দিরে।
জামাই ষষ্ঠীর আসল আকর্ষণ অবশ্যই মধ্যাহ্নভোজ। মহাপ্রভুর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। জামাইষষ্ঠীর জন্য বিশেষ ভোগের আয়োজন করা হয়। এদিন মধ্যাহ্নে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় শাক, থোড়, মোচা, শুক্ত, পনিরের ডালনার মতো পাঁচ রকমের তরকারি। এছাড়াও ডালের সঙ্গে থাকে পাঁচ ধরনের ভাজা। তবে এ দিনের ভোগের সেরা পদটি অবশ্যই আম- ক্ষীর। বিষ্ণপ্রিয়াদেবীর পরিবারের সদস্য এবং সেবায়েত সুবীরকুমার গোস্বামী জানালেন, এই আমের রস মিশিয়ে তৈরি এই ক্ষীরের পদ চৈতন্যদেবের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। আর সবশেষে মহাপ্রভুকে মুখশুদ্ধি এবং পান সাজিয়ে নিবেদন করা হয়। জামাই ষষ্ঠীর দিনে জামাইয়ের রসনাতৃপ্তিতে তো কোনও ত্রুটি রাখা যায় না!