জন্মের সময় থেকেই দুটি হাত নেই। তাই পা দিয়েই লেখেন এই শিক্ষক। স্কুলে ক্লাস নেন পা দিয়ে লিখে।
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকের বেরেন্ডা পঞ্চায়েতের বেলুটি গ্রামে বাড়ি বছর ৩৫-এর জগন্নাথ বাউরির। তিনিই বাড়ির বড় ছেলে। ছোট ভাইয়ের নাম বলরাম। জগন্নাথবাবু বলেন, জন্মের সময় থেকেই তাঁর দুটি হাতই নেই। তখন থেকেই গ্রামের সবাই তাঁকে জগন্নাথদেবের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা লক্ষ্মণচন্দ্র বাউরি ও মা সুমিত্রা বাউরি মনে করতেন, প্রভু জগন্নাথদেবের আশীর্বাদেই একদিন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন।
স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য শৈশবে তাঁর বাবা তাঁকে বেলুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। তদানীন্তন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পাল তাঁর বাবাকে বলেন, প্রভু জগন্নাথদেবকে স্মরণ করে তোমার ছেলের নাম রাখো জগন্নাথ। বাবা প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের সেই কথা মেনে নেন। জগন্নাথ বাউরি নামেই তার পরিচিতি হয়। শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জীবন।
একসময়ে বাবা-মা ক্ষেতমজুরির কাজ করে সংসার চালাতেন। জগন্নাথ বাউরির বলেন, তাঁর পা ধরে পায়ে পেনসিল গুঁজে দিয়ে লেখা শিখিয়ে ছিলেন প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পাল। পা দিয়ে লেখালেখি শিখেতে পারার পর থেকেই তাঁর লেখাপড়া শেখার আগ্রহ বাড়ে। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বেসিক ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হন। ট্রেনিং সম্পূর্ণ করে পরে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পান।
জগন্নাথবাবু বলেন, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি আউশগ্রামের জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। স্ত্রী লক্ষী, বাবা, মা, ভাই, বোন সবাইকে নিয়ে এখন ভরা সংসার জগন্নাথবাবুর। বিদ্যালয়ের সহকর্মী , ছাত্র-ছাত্রী সকলেই তাঁদের প্রিয় জগন্নাথ স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরও জন্ম থেকে দুটি হাত নেই। সেকারণেই তাঁর নাম রাখা হয় জগন্নাথ।