ভোটের ফল পক্ষে না যাওয়ায় অদ্ভুত নিদান দিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা। 'যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন তাঁরা আর কোনওদিন কোনও সুযোগ সুবিধা নিতে আসবেন না'। এমনই নিদান দিয়েছেন রায়গঞ্জ পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সরকার। এমনকি তাঁর বাড়িতে আসা ওয়ার্ডের এক দুস্থ বাসিন্দা সাহায্য-সহযোগিতা চাইতে আসলে তাঁকে বিজেপি পার্টি অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জ পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সরকারের এহেন আচরণে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। একজন জনপ্রতিনিধির এহেন আচরণ কি করে করেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির কাছে ২০৭৪৮ ভোটে পরাজিত হয়েছেন তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তৃনমূল কংগ্রেস পরিচালিত রায়গঞ্জ পুরসভার ২৭ টি ওয়ার্ডেই রয়েছে তৃনমূলের কাউন্সিলর। অথচ ভোট গননার পরে সেই রায়গঞ্জ পুরসভা এলাকায় তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিজেপি প্রার্থীর চাইতে ৯৯৪৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। রায়গঞ্জ পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল ২৭৫ ভোটে বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। এরপরই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সরকার তাঁর নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন 'রায়গঞ্জে যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন তারা বিপদে কোনো তৃনমূল কর্মীদের কাছে আসবেন না। যদি আপনাদের মনুষ্যত্ব থাকে'।
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা মঞ্জু রায় অভিযোগ করেন,বুধবার সকালে কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সরকারের বাড়িতে সাহায্য চাইতে গেলে তাঁকে বিজেপি কার্যালয়ে সাহায্য চাইতে যাওয়ার কথা বলেন। এমনকি কাউন্সিলর নিজের বাড়ির সামনে এই মর্মে পোস্টারও সেঁটেছিলেন। পরে যদিও তিনি সেই পোস্টার খুলে ফেলেন।
এই ধরনের নিদান দেওয়ার কথাও স্বীকার করে নিয়ে তৃনমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, সারাবছর এলাকার মানুষের পরিষেবা দিয়ে এসেছি। সরকারি সমস্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে অথচ তারা ভোট দিয়ে রায়গঞ্জ বিধানসভায় বিজেপিকে জিতিয়েছে। আর সেজন্যই সেইসব মানুষদের কাছে আবেদন আর যেন তারা কোনও সুযোগ সুবিধা নিতে না আসেন।
বিধানসভা ভোটের ফলে আমরা দেখেছে রাজ্যে অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ মুখ্যমন্ত্রীর হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য জুড়ে নির্বাচন পরবর্তী যে সন্ত্রাস তা ক্রমশ লাগামহীন হয়ে উঠছে। কোথায় ঘটছে বাড়ি বাড়ি চলছে হামলা, ঝড়ছে রক্ত,ঘটছে প্রাণনাশেরও ঘটনা। কোথাও আবার দেওয়া হচ্ছে রায়গঞ্জের মত নিদান। রাজভবনে শপথ বাক্য পাঠ করানোর পর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও মুখ্যমন্ত্রীকে দলমত নির্বিশেষে তার রাজধর্ম স্মরণ করিয়ে বলেছেন, রাজ্য জুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসা থামানোর জন্য। আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই আশ্বাস যেন বাস্তবের মাটিতে রূপ পায়, সেই আশাতেই রাজ্যের মানুষ।