হায়দরাবাদের ঘটনার পর সোশ্য়াল মিডিয়ায় বিপদের সময় মহিলাদের সাহায্যের বার্তা দিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। কোনও সংগঠনের মাধ্যমে হোক অথবা ব্যক্তিগতভাবে, নিজেদের ফোন নম্বর ফেসবুকে পোস্ট করে বিপন্ন মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকেই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে নয়, বাস্তবিকই এক বিপন্ন গৃহবধূকে তাঁর পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের এক শ্রমিক নেতা। স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে চিন্তামুক্ত হয়েছেন মহিলার স্বামীও।
রায়গঞ্জের ওই তৃণমূল নেতার নাম কৌশিক দে। তিনি রায়গঞ্জে সরকারি বাস ডিপোয় আইএনটিটিইউসি-র কর্মী সংগঠনের সভাপতি। সোমবার রাত একটা নাগাদ একটি অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ফিরছিলেন কৌশিকবাবু। রায়গঞ্জ শহরের ফোয়ারা মোড়ের কাছে মহাত্মা গান্ধী রোডে রাস্তার উপরেই এক মহিলাকে চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সন্দেহ হওয়ায় ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন কৌশিকবাবু। ওই মহিলা জানান, তিনি বাড়ির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। প্রীতি সরকার নামে ওই মহিলা বাড়ির ঠিকানাও ঠিক মতো বলতে পারেননি।
সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের সাহায্য়ে ওই মহিলাকে রায়গঞ্জ থানায় নিয়ে যান কৌশিকবাবু। তাঁকে খাবার এবং জলও দেওয়া হয়। মহিলার ছবি তুলে তাঁর পরিচয় জানতে ফেসবুকে পোস্ট করেন ওই তৃণমূল নেতা। এতেই কাজ হয়।
রায়গঞ্জের রারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক সরকার গ্রামেরই এক যুবকের ফেসবুকে তাঁর স্ত্রীর ছবি দেখতে পেয়ে কৌশিকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে রায়গঞ্জ থানায় এসে তাঁর স্ত্রীকে খুঁজে পান। মানিকবাবু জানান, রবিবার তাঁর স্ত্রী আচমকা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি। বিশেষত হায়দরাবাদের তরুণী পশু চিকিৎসকের নৃশংস পরিণতির পরে উদ্বেগ আরও বাড়ে। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি স্ত্রীর পাশে দাঁড়াবেন, এই আশাতেই ছিলেন মানিকবাবু। স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে কৌশিকবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই গৃহবধূর স্বামী।
কিন্তু কীভাবে হারিয়ে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ? কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, ওই গৃহবধূর বাড়ি রারিয়া গ্রামের হাঁসপুকুর এলাকায়। রায়গঞ্জ থেকে ওই এলাকার দূরত্ব ছয় থেকে সাত কিলোমিটার। ওই গৃহবধূর স্বামী সবজির ব্যবসা করেন। রবিবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে রায়গঞ্জ শহরে আড়তদারের কাছে এসেছিলেন। বাড়ি ফেরার আগে স্ত্রীকে টোটোতে বসিয়ে একটি কাজ সারতে যান মানিকবাবু। দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি না ফেরায় রাগ করে টোটোয় করে রওনা দেন ওই মহিলা। এর পরেই মাঝরাস্তায় টোটো থেকে নেমে তিনি পথ হারিয়ে ফেলেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। পরে তাঁকে উদ্ধার করেন কৌশিকবাবু।
কৌশিকবাবু বলেন, 'আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। কোনও মহিলা যাতে পথেঘাটে বিপদে না পড়েন, সেটা দেখা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। যুব সমাজকেও বলব মহিলাদের সাহায্যে সবাই যেন এগিয়ে আসে।'