নবান্ন অভিযানের রেশ মিটতে না মিটতেই এবার শুরু হয়ে গেল শান্তি মিছিল বনাম মোমবাতি মিছিল নিয়ে লড়াই। মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ডের পর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে হিংসার আবহ তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতা এবং অর্জুন সিং-এর বিশ্বস্ত সহচর মণীশের খুনের ঘটনার পর থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল শিল্পাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা। জায়গায়-জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী এবং সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে শুক্রবার ব্যারাকপুরে এক শান্তি মিছিল করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যার ঘোষণা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় করেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শান্তি মিছিলের এমন ডাক শুনে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং জানিয়ে দেন বিজেপি-র ডাকে তাঁরা মোমবাতি মিছিল করবেন।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল, বিশেষ করে টিটাগড়ে পুরসভার অধীনস্থ এলাকায় যে ভাবে রাজনৈতিক হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে চিন্তা বাড়়ছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানান জ্যোতিপ্রিয়। এদিন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত টিটাগড় পুরসভায় এদিন এক বৈঠক করেন জ্যোতিপ্রিয়। সেখানে শান্তি মিছিল এবং ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলার অবনিত নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়েই জ্যোতিপ্রিয় এলাকার আইন-শৃঙ্খলা অবনতির জন্য বিজেপি-র দিকে আঙুল তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন আগে যে রাজনৈতিক হিংসা ভাটপাড়া এবং তার সংলগ্ন কিছু এলাকায় সীমাাবদ্ধ ছিল, তা এখন বাড়তে ব্যারাকপুর ও টিটাগড়েও পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস এলাকায় শান্তি-র আবহ তৈরি করতে চায় বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়।
আরও পড়ুন- 'বোমা ফেলেছে কলকাতা পুলিশ', নবান্ন অভিযান নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিযোগ কৈলাস বিজয়বর্গীয়র, দেখুন
জ্যোতিপ্রিয়-র শান্তির বার্তাকে অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ডে সিবিআই হচ্ছে। এবার পানিহাটি থেকে শুরু করে ব্যারাকপুর পর্যন্ত যত রাঘব বোয়াল রয়েছে সব জালে ধরা পড়বে। এমনকী, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে হিংসা এবং খুনের রাজনীতির জন্য নাম নিয়ে ফিরহাদ হামিক, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং নান্টু ঘোষকে আক্রণ করেন অর্জুন। বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, মেটিয়াবুরুজ এবং ক্যানিং থেকে দুষ্কৃতী এনে ব্যারাকপুরে ঢোকাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। জ্যোতিপ্রিয় তাঁর আলু চুরির অর্থ এই অশান্তি তৈরির জন্য খরচ করছে বলেও অভিযোগ করেন অর্জুন। তিনি জানান, ব্যারাকপুর থেকে টিটাগড়ে যেখানে মণীশের উপর গুলি চালানো হয়েছিল, সেই স্পট পর্যন্ত বিজেপি একটি মোমবাতি মিছিল করবে। এই মিছিলে অন্তত হাজার পাঁচেক লোক থাকবে বলেও দাবি করেছেন অর্জুন।
আরও পড়ুন- বিজেপি নেতা মনীশ শুক্ল খুনে সিবিআই তদন্ত চাই, জনস্বার্থ মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টে
বৃহস্পতিবার রাতে খড়দহের আদর্শপল্লিতে খুন হওয়া বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লার বাড়িতে যান দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং, নিশীথ প্রামাণিক এবং তেজস্বী সূর্যরা। মণীশের বাবা ও মা-এর সঙ্গে কথা বলেন দিলীপ। তাঁদের আশ্বস্ত করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। পরে, বাইরে বেরিয়ে রীতিমতো তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন তিনি। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন পুলিশের। প্রশাসনকে দলদাসে পরিণত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দিলীপ। তৃণমূলের শান্তি মিছিলের কথা শুনে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন দিলীপ। তিনি জানান, মানুষ খুন করে কিসের শান্তি মিছিল। এখন পর্যন্ত তাঁর দলের ১১৫ জন কর্মী খুন হয়েছেন বলেও তথ্য দেন দিলীপ। তিনি বলেন, খুন হয়েছেন খোদ বিজেপি-র বিধায়ক থেকে শুরু করে কাউন্সিলার, সাধারণ কর্মীরা। সেইসঙ্গে তিনি জানান, বিজেপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখে। খুব শিগগিরি মানুষ এর জবাব দেবে বলেও জানিয়েছেন দিলীপ।
মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ড স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য-রাজনীতিতে একটা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রীতিমতো সোচ্চার তারা। নবান্ন অভিযানেরও একটা অন্যতম কারণ ছিল মণীশ শুক্লার হত্যা। বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে ততই রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামটা বিজেপি বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানের মধ্যে দিয়ে বাজিয়ে দিয়েছে। এখন সময় যত এগোবে ততই বিজেপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র থেকে তীব্রতর করবে।