ভুগোলে অনার্স দুই বোন, চাষ করেই সংসার টানছেন দীপা- সমাপ্তি

  • উত্তর চব্বিশ পরগণার হাবরার বাসিন্দা দুই বোন
  • দুই বোনের নাম দীপা এবং সমাপ্তি মণ্ডল
  • ভুগোলে স্নাতক হয়েও চাষ করে দিন গুজরান
  • সরকারি চাকরি না পেয়েই চাষের কাজে মনোনিবেশ

দুই বোনই ভুগোলে অনার্স পাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। না, উচ্চ শিক্ষিত হয়েও চাকরি বা শিক্ষকতা নয়. উত্তর চব্বিশ পরগণার হাবরার কুমড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা দুই বোনের দিনের একটা বড় সময় কাটে চাষের মাঠে। যা নিয়ে তাঁরা রীতিমতো গর্বিত। দুই বোন চাষ করে যে আয় করেন, তাতেই চলে মাকে নিয়ে তিনজনের সংসার। 

হাবরার কুমড়া পঞ্চায়েততের আনখোলার বাসিন্দা দীপা এবং সমাপ্তি মণ্ডলের এই লড়াইয়ের কথা এলাকার বিডিও-রও কানে গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের জমিতে চাষ করে সংসার চালাচ্ছেন তাঁরা।  দুই মেয়েকে নিয়ে রীতিমতো গর্বিত তাঁদের মা অঞ্জলী মণ্ডলও। 

Latest Videos

আরও পড়ুন- চাকরি খুঁজতে বাঙালিরা কোথায় যান, বিয়ের জন্যই বা সেরা ঠিকানা কোনটি, রইল তথ্য

আরও পড়ুন- বেসরকারি চাকরিতে স্থানীয়দের জন্য ৭৫ শতাংশ সংরক্ষণ, পথ দেখাল দেশের এই রাজ্য

অঞ্জলী দেবী এবং তাঁর স্বামী ভোলানাথ মণ্ডলের মোট ছয় মেয়ে। তাঁদের মধ্যে চারজনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চাষ করেই মেয়েদের বড় করেছেন ভোলানাথ বাবু। মেয়েরা বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, এই আশাতে তাদের যথাসম্ভব ভাল স্কুল এবং কলেজে পড়িয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে সবথেকে মেধাবী ছিল দীপা এবং সমাপ্তি। 

বেশ কয়েক বছর ধরে শয্যাশায়ী থাকার পরে ২০১৫ সালে মারা যান ভোলানাথবাবু। তখন থেকেই নিয়মিত চাষের কাজ করছে দুই বোন। তাঁদের মধ্যে চাষের কাজে বেশি দক্ষ ছোট বোন সমাপ্তি। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই চাষের কাজে হাত লাগিয়েছিল সে। বোনকে যথাসম্ভব সাহায্য করে দিদি দিপা মণ্ডলও। বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি তিনি। কিন্তু বাবার স্বপ্নপূরণে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দীপা। এর পাশাপাশি মাঠে গিয়ে চাষের কাজও করছেন সমান তালে। 

ভুগোলে স্নাতক হয়েও চাষের কাজ করতে কেমন লাগে? প্রশ্ন শুনে এতটুকু না ভেবেই সমাপ্তির উত্তর, 'চাষবাষকে অনেকেই হয়তো ছোট বলে মনে করেন। কিন্তু আমি চাষ করে গর্বিত। আমি তো চুরি, ছিনতাই করতে যাচ্ছি না। আর চাকরি পাওয়াটাই যদি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তো এছাড়া উপায়ও নেই।' সমাপ্তি জানায়, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সে অল্প বিস্তর চাষবাষের কাজ করত। কীভাবে চাষ করতে হয়, বাবার থেকেই তা হাতেকলমে শিখে নিয়েছিল সমাপ্তি। এখন বীজ ছড়ানো থেকে শুরু করে ফসলের পরিচর্যা অথবা ধান কাটা, সব কাজেই অভিজ্ঞ সে। 

তবে সরকারি চাকরি না পেয়ে বেশ হতাশ সমাপ্তির দিদি দীপা। তবু হাল ছাড়তে চাননা তিনিও। দীপা বলেন, 'এই জমিটাই আমাদের সম্পদ। সংসারটাতো চালাতে হবে, তাই চাষাবাষ করতেই হয়। একই সঙ্গে সরকারি চাকরির জন্যও পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। যে কোনওভাবে হোক সরকারি চাকরি পেয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ করতে হবে। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। আশা করব তিনি আমাদের জন্য কিছু করবেন।' দীপার অভিযোগ, কন্যাশ্রীর টাকা ছাড়া কোনও সরকারি সাহায্যই এখনও পর্যন্ত পাননি তাঁরা। চাষের কাজ করার পাশাপাশি টিউশন পড়ানো, ছোটখাটো হাতের কাজও করেন দুই বোন। 

সমাপ্তী এবং দীপার মা অঞ্জলীদেবী বলেন, 'আমার ছেলে নেই, মেয়েরাই সংসারের হাল ধরেছে। বাবা মারা যাওয়ার আগে থেকেই ওঁরা এই সব কাজ করে। আমরা ভাবতাম যেভাবেই হোক চাষ করেও মেয়েদের মানুষ করব। আমার মেয়েরা কোনওদিন চাষের কাজে লজ্জা পায়নি।' সরকারি চাকরির স্বপ্ন কবে পূরণ হবে তা সময় বলবে, তবে দীপা এবং সমাপ্তিকে জেলাশাসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাবরা- এক অঞ্চলের বিডিও। 
 

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari : 'চরম পরিণতি হবে বাংলাদেশের ইউনূসের' #shorts #suvenduadhikari #bangladesh
'ভিসা বন্ধ করুন, এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট বন্ধ করুক ভারত' জ্বলে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari : 'বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য কেন চুপ এরা' #shorts #suvenduadhikari #bangladesh
প্রবল চাপে Bangladesh! নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে Ranaghat-এ সনাতনীদের প্রতিবাদ মিছিল | Nadia News Today
'ভারতে আসবি না, চিকিৎসা করাতে লাহোর, করাচিতে যা' ইউনূসকে ধুয়ে দিলেন Suvendu Adhikari | Bangla News