প্রেমিকার সমকাম কি মেনে না নিতে পেরেই চিরবিদায়ে বিক্রম, খড়দহে প্রেমিকের মৃত্যুকাণ্ডে নয়া মোড়

বিক্রমের পরিবারের অভিযোগ, মৌসুমী বরাবরই বিলাসী এবং হাইপ্রোফাইল লাইফস্টাইল তাঁর পছন্দের। এর জন্য প্রেমিক বিক্রমকে সে চাপও দিত। বিক্রমের তেমন আয়ের সংস্থান ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। তবু, প্রেমিকা মৌসুমীর চাহিদা পূরণের চেষ্টা সে করত বলে দাবি পরিবারের।

Web Desk - ANB | Published : Mar 13, 2022 2:44 PM IST / Updated: Mar 13 2022, 08:18 PM IST

কেটে গেছে ১৭টা দিন। কিন্তু এখনও বিক্রম মৃত্যুকাণ্ডের (Vikram Death Case) তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ পরিবারের। এর জন্য রবিবার খড়দহের (khardaha) কল্যাণনগর মাঠপাড়া এলাকায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্রমের মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার প্রেমিকা মৌসুমী দাসের (Vikram Lover Mousumi Das) বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। মৌসুমীকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হয়নি সে প্রশ্নও তুলেছে বিক্রমের পরিবার। ২৭ ফেব্রুয়ারি খড়দহে নিজের বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী (Vikram Committed Suicide) হয় বিক্রম। মৌসুমীর সঙ্গে ৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় বিক্রম মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। 

বিক্রমের পরিবারের অভিযোগ, মৌসুমী বরাবরই বিলাসী এবং হাইপ্রোফাইল লাইফস্টাইল (High profile lifestyle) তাঁর পছন্দের। এর জন্য প্রেমিক বিক্রমকে সে চাপও দিত। বিক্রমের তেমন আয়ের সংস্থান ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। তবু, প্রেমিকা মৌসুমীর চাহিদা পূরণের চেষ্টা সে করত বলে দাবি পরিবারের। বহুবার মৌসুমী চাপ দিয়ে বিক্রমের কাছ থেকে দামি লিপস্টিক থেকে শুরু করে দামি দামি সাজগোজের কসমেটিক্স আদায় করেছে বলেও অভিযোগ। এতকিছুর পরও মৌসুমী কিছুদিন ধরেই বিক্রমকে এড়িয়ে চলছিল বলে অভিযোগ পরিবারের। বেকার থেকে শুরু করে নানা ধরনের অশ্রাব্য শব্দ প্রয়োগে সে বারবার প্রেমিক বিক্রমকে আঘাত করত বলেও অভিযোগ। এমনকী অন্য কারও সঙ্গে মৌসুমী সম্পর্কে জড়িয়েছিল বলেও বিক্রমের কাছে খবর ছিল। এই নিয়েও মৌসুমী ও বিক্রমের মধ্যে বাদানুবাদ হয়েছে। বিক্রম এই তৃতীয় জনের নাম-পরিচয় জানলেও সে তা প্রকাশ করেনি বলে জানা গিয়েছে। তবে, মৌসুমী এবং বিক্রমের মধ্যে কথোকথনের ফোন রেকর্ডিং থেকে পরিস্কার বিক্রম এই তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় ভালো মতোই জানত। 

আরও পড়ুন- পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি, রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়লেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলর

বিক্রমের ফোন থেকে আরও একটি অডিও রেকর্ডিং (Audio Recording) পাওয়া গিয়েছে। যেখানে মৌসুমীকে এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। এই তরুণী-র সঙ্গে মৌসুমী দীর্ঘ কথোপকথন রেকর্ডিং হয়েছে। কথোপকথনে মৌসুমী বারবার ওই তরুণীকে তার সঙ্গে জীবন বাঁধার জন্য আবেদন করছে। ওই তরুণীকে ছাড়া যে মৌসুমী থাকতে পারবে না সে কথাও অডিও-তে রয়েছে। কিন্তু কোনও কারণে তরুণী যে এই সম্পর্ক নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে তাও অডিও টেপে ধরা পড়েছে। কে এই তরুণী? যার সঙ্গে মৌসুমী ঘর করার স্বপ্ন দেখছেন? তাহলে কি মৌসুমী সমকামে আসক্ত হয়েছিল? এই বিষয়গুলিতে কোনও তথ্য সেভাবে দিতে পারেননি মৃত বিক্রমের পরিবার। বিক্রমের ফোনে এই অডিও কীভাবে এল তার কোনও তথ্য নেই। 

আরও পড়ুন- মাসের পর মাস কোটশিলায় নিখোঁজ গবাদি পশু, অবশেষে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ল চিতা বাঘের হামলার ছবি

বিক্রমের পরিবারের দেওয়া আর একটি অডিও টেপে ধরা পড়েছে মৌসুমীর আচরণ। এই অডিও টেপে মৌসুমী সাফ বিক্রমকে জানিয়েছিল যে তার ব্যাঙ্গালোরে থাকা কোনও আইটি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। বিক্রম ওই আইটি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কনফারেন্সে কলে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য মৌসুমীর কাছে আবেদনও করেছিল। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে মৌসুমী জানিয়ে দিয়েছিল এখন কথা বলানো সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে মৌসুমী বেশ কয়েকবার বিক্রমের গরিবি নিয়ে বেশ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করে। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। 

অন্য একটি অডিও ক্লিপে বিক্রমকে রীতিমতো কাতর আবেদন করতে শোনা যায় মৌসুমীর কাছে। কেউ একজন মৌসুমীর শরীর স্পর্শ করেছে এটা জানতে পেরে বিক্রম প্রবলভাবে যে হতাশ তা অডিওতে ফুটে উঠেছে। মৌসুমীর সঙ্গে বিক্রমের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তাও এই অডিওতে উঠে এসেছে। বর্তমানে কেউ একজন মৌসুমীর সঙ্গে শারীরিক প্রেমে মেতেছে সেটা যে ভালোভাবে সে নিচ্ছে না সেটাও বিক্রমকে বলতে শোনা গিয়েছে এই অডিওতে। একটা সময় বিক্রমকে কাঁদতে শোনা যায় অডিওতে। সেই সঙ্গে কাতর প্রার্থনা প্রেমিকা মৌসুমীর উদ্দেশে। প্রেমিকাকে ফিরে পেতে তার পা পর্যন্ত ধরতে রাজি বিক্রম সেটাও এই অডিওতে স্পষ্ট। 

আরও পড়ুন- বিএসএফ-র তৎপরতায় আটকাল পাচার, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাত ধরেই বাংলাদেশে ফিরে গেল ২ যুবতী

তিনিটি অডিও-তে থেকেই অনেকটা পরিস্কার যে বিক্রম সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলেও মৌসুমী তা চাইছিল না। কোন কারণে মৌসুমীর এমন সিদ্ধান্ত ছিল তা পরিস্কার না হলেও অন্তত আঁচ করা গিয়েছে যে বিক্রমের আর্থিক দুরাবস্থা এর অন্যতম একটা বিষয়। তবে সমকামের জন্য আদৌ মৌসুমী বিক্রমের থেকে দূরে সরতে চাইছিল কি না তা তদন্ত সাপেক্ষ। যদিও, এক তরুণীর সঙ্গে মৌসুমীর ঘনিষ্ট কথাবার্তা সমকামের একটা অ্যাঙ্গেল যে এই ঘটনায় তৈরি করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, সবকিছুর মধ্যেই বিক্রমের পরিবারের দাবি অবিলম্বে মৌসুমীকে গ্রেফতার করতে হবে। আসলে বিক্রমের আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে মৌসুমীর উসকানি। এদিকে এই বিষয়ে তদন্ত কতদূর তা নিয়ে মুখ খোলেনি খড়দহ পুলিশ।

Share this article
click me!