২০১৫ সালে বিশ্ব দেখেছিল সেই ভয়াবহ ছবি। যেখানে একটি চিতাবাঘকে মেরে ফেলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর ছবি ছিল পুরুলিয়ার কোটশিলার। সেখানেই এবার সিমনি জাবর জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে চিতাবাঘের হানা।
মাসের পর নিখোঁজ একাধিক গবাদি পশু (Cattle Missing)। কারও মতে সংখ্যাটা ঠিক করে গুনতে পারলে কোনওভাবেই ২০টি-র নিচে নয়। আবার কারও মতে ১৪ থেকে ১৫টা গরু-ছাগল-মোষ নিখোঁজ। পরে এদের কারও খোবলা দেহাবশেষ (Body Part) পাওয়া গিয়েছে গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে (Forest Near Village)। সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়ার গবাদি পশুর সংখ্যাটা সমানে বাড়তে থাকে। মেলে একটা মোষের খোবলানো দেহ। এখান থেকেই কোটশিলার (Kotshila) সিমনি জাবর জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষদের (Village People) সন্দেহ হয়। খবর দেওয়া হয় বনদফতরে (Forest Department)। বসানো হয় ট্র্যাপ ক্যামেরা (Trap Camera)। দেখা যায় গবাদি পশু শিকারের এই শিকারি আর কেউ নয়, একটি আস্ত চিতাবাঘ (Leopard)।
এরপর কোটিশাল বনদফতর থেকে এলাকায় চিতাবাঘের উপস্থিতির কথা প্রকাশ্যে আনা হয়। যেখানে এই ঘটনা তার পাশেই রয়েছে ঝাড়খণ্ড। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে সিমনি জাবর নামে পরিচিত এই জঙ্গল ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। কোটশিলা অঞ্চলও এই জঙ্গলের অধীনে। কিন্তু বেড়ে চলা জনবসতি এখানে জঙ্গলকে অনেকটাই ধ্বংস করেছে। এর জন্য অবশ্য বন্যপ্রাণের উৎপাত বেড়েছে এলাকায়। এর আগে ২০১৫ সালেও চিতাবাঘ লোকালয়ে চলে এসেছিল। পরে সেই চিতাবাঘকে মেরে গলায় দড়ি লাগিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিল গ্রামবাসীরা। সেই নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়। আন্তর্জাতিক পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। এরপর লোকালয়ে চিতা বাঘ দেখা না গেলেও মাঝে মধ্যে গৃহপালিত পশু বা মুরগি, হাঁস মাঝে-মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যেত। পরে জঙ্গলের কোথাও এদের হাড়গোড় বা দেহাবশেষ মিলত। কিন্তু এবার যেন আচমকাই এই নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যাটা দ্রুত বেড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- বিএসএফ-র তৎপরতায় আটকাল পাচার, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাত ধরেই বাংলাদেশে ফিরে গেল ২ যুবতী
রাতে শিকারের খোঁজে চিতাবাঘ
ট্র্যাপ ক্যামেরায় চিতাবাঘের ছবি ধরা পড়তেই তা এলাকার সমস্ত বনদফতর অফিস এবং ঝাড়খণ্ডের বন দফতরকেও পাঠানো হয়েছে। আপাতত চিতা বাঘটিকে কীভাবে ধরা যায় অথবা তাকে গভীর জঙ্গলে ঠেলে পাঠানো যায় তার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কোটশিলা বন দফতরের জেলা বনাধিকারিক দেবাশীস শর্মা। চিতাবাঘের ছবি-সহ অরণ্য ভবনে রাজ্য বন দফতরের অফিসেও রিপোর্ট করা হয়েছে। এখন চিতাবাঘটিকে খুঁজে পেতে ট্র্যাকস অ্যান্ড টেল অর্থাৎ ওই চিতাবাঘের পায়ের ছাপ, বিষ্ঠা, গতিবিধি, যাতায়াত, জল পান করার জায়গাকে সামনে রেখে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বন দফতর। এর পুঙ্খনাপুঙ্খ রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছে জেলা পুরুলিয়া বনদফতর। বন দফতর থেকে মাইকিং করে গ্রামবাসীদের জঙ্গলে যেতেও বারণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- অসম-বাংলা সীমান্তে ট্রাক থেকে উদ্ধার অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু, গ্রেফতার দুই পাচারকারী
গবাদি পশুর দেহাবশেষ
স্থানীয় গ্রামবাসীদের মতে, ২০১৫ সালের পর এই এলাকায় চিতাবাঘ দেখা যেত না। জঙ্গলে ভালুক থেকে শুরু করে নেকড়ে, হায়েনা, হাতি রয়েছে। কিন্তু চিতা বাঘের ঘন ঘন দর্শন কেউই পায়নি। স্বাভাবিকভাবেই এখন এলাকায় আতঙ্ক। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে গ্রামের বাইরে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। মাঠে-ঘাটে কাজ না করলে তারা খাবেন কি? এমন প্রশ্নও অনেকে করেছেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিতা বাঘটিকে ধরার জন্য বন দফতরের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তারা। গ্রামবাসীরা চাননা এই চিতা বাঘকে ঘিরে মানুষের মনে এমন এক আতঙ্ক তৈরি হোক যার জেরে ২০১৫ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। কোটশিলা এলাকায় আদিবাসীদেরই বাস। জঙ্গলে শিকার করতে যাওয়াটা তাঁদের কাছে খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু তারাও চাইছেন না বন্য আইন ভেঙে কোনও কিছু করতে।