বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পডুয়ারা আন্দোলন থেকে সরছে না। শুরু করেছে রিলে আনশন। পাশাপাশি সকালবেলায় ফুল হাতে উপাচার্যের বাড়ির সামনে অবস্থান।
আশিস মণ্ডল, বোলপুর, এবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন অন্যমাত্রা দিন। গত ১০ দিন ধরেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছে পড়ুয়ার। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই রবিবার দুপুর থেকে বিশ্বভারতীয় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা রিলে অনশন শুরু করেছে। পাশাপাশি শিক্ষক দিবসে উপাচার্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে তাঁরা পিছপা হয়নি। সকাল বেলাই ফুলের স্তবক হাতে পৌঁছে গিয়েছিল উপাচার্যের বাড়ির সামনে।
আন্দোলন যতই চড়া হোক না কেন তিনি শিক্ষক, এই বার্তা নিয়েই অবস্থানে বসা পড়ুয়ারা রবিবার শিক্ষক দিবসের সকালে পুষ্পস্তবক হাতে পৌছে গিয়েছিলেন উপাচার্যের বাংলোর দরজায়। চেয়েছিলেন ভিতরে গিয়ে উপাচার্যকে সম্মান জানাতে। কিন্তু তাতে রাজি হননি উপাচার্য। তিনি কোনও রকম সাড়া দেননি। তাই ফুল উপাচার্যের দরজায় নামিয়ে রেখেই ফিরে আসেন পড়ুয়ারা। এর আগে শনিবার গভীর রাতে আশ্রমগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে পড়ুয়ারা আশ্রম সঙ্গীত গাইতে গাইতে পথ হেঁটেছিলেন ক্যাম্পাসে। সেইসঙ্গে ক্যাম্পাসে বর্তমান বন্দীদশা ও অচলায়তনের প্রতীক হিসাবে কেউ দুটো হাত বেঁধে রেখেছিলেন কাপড়ে, কেউ হাতে জড়িয়েছিলেন সেলোটেপ তো কেউ শরীরে সাথেই বেঁধেছিলেন দুই হাত।
সাবধান, আপনার কোভিড ১৯ টিকা আসল তো, রইল কোভিশিল্ড-কোভ্যাক্সিন-স্পিটনিক ভি চেনার সহজ উপায়
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পোপ, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার আবেদন
শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল তিন পড়ুয়ার বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে অবস্থানে বসা পড়ুয়ারা নানান কর্মসূচী পালনের পর দুপুরে আন্দোলনের নয়া রূপ দিয়েছেন। এবার শুরু হয়েছে অনশন। ১০ দিন ধরে ধরে লাগাতার অবস্থান করেও পড়ুয়াদের দাবি না মেটায়, কর্তৃপক্ষের কোনরূপ সাড়া না মেলায় এবার শুরু হয়েছে অনশন। অনশনে বসেছেন বহিষ্কৃত ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী। তিনি একা নন, অনশনে তাঁর সাথী হয়েছেন সাসপেন্ড হওয়া অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যও।
পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, উপাচার্যের একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা মেনে নেওয়া যায় না। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। প্রথমে অধ্যাপক কর্মীদের সাসপেনশন, শায়েস্তা, হেনস্থা তারপর তাঁর বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় পড়ুয়াদের উপর আক্রমণ-গত কয়েকমাস ধরে উপাচার্য এক স্বৈরাচারী রাজত্ব কায়েম করেছেন বিশ্বভারতীতে। শেষমেশ তিন পড়ুয়াকে বহিষ্কারের মত কঠোর পদক্ষেপ নিতেও তিনি পিছপা হননি। তাই এই উপাচার্যের সাথে কোনও আপোস নয়, বহিষ্কার সাসপেনশন প্রত্যাহারের সাথে উপাচার্যের অপসারণের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
করোনা-মহামারিকালে বদলে গেছে প্রেমের সংজ্ঞা, এখন আর বাইরে নয় নিরাপদে ঘরে বসে প্রেমালাপ নতুন প্রজন্মর
বহিষ্কৃত ছাত্র এসএফআই নেতা সোমনাথ সৌ জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম যত দিন যাবে ততই আন্দোলন তীব্র হবে। আইনী পথেও লড়াই চলছে, লড়াই চলবে মাটিতেও। এদিন রিলে অনশনের মধ্য দিয়ে সেই বার্তাই আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে।’’এদিন দুপুরে অনশন শুরু করেছেন বহিষ্কৃত ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী। তার কিছুক্ষন পড়ে সেই অনশনে সামিল হয়েছেন অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা’র সভাপতি অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। যিনিও পড়ুয়াদের মত উপাচার্যের রোষের শিকার গত প্রায় এক বছর ধরে। নানান ভাবে তাকে হেনস্থা করেও সফল না হয়ে উপাচার্য সাসপেন্ড করে রেখেছেন এই অধ্যাপককে। তেমনই অভিযোগ। কারণ উপাচার্যের নানা অনাচারের বিরুদ্ধে বারেবারেই সরব হয়েছেন এই অধ্যাপক।
অনশনরত ছাত্রী ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা দশদিন ধরে উপাচার্যের বাড়ির কাছে অবস্থান করছি। এই দীর্ঘ সময় ধরে আমরা আমাদের বক্তব্য, আবেদন উপাচার্যের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। তাই আজ থেকে আমি অনশন শুরু করলাম। যতদিন না আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে ততদিন অনশন চলবে।’’ এদিন অনশন মঞ্চে বসে উপাচার্যের প্রতি তীব্র আক্রমন শানিয়েছেন অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যও। বলেছেন, ‘‘উপাচার্য ক্রমাগত মিথ্যাচার করে চলেছেন। কখনও বলছেন পড়ুয়ারা তালা মেরেছেন, কখনও বলছেন পড়ুয়াদের আন্দোলনের জন্য বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। যা প্রমানীতও হয়েছিল। সেই নথি আমার কাছে আছে। তাই তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারেন নি। তাই এই মিথ্যাচারী, স্বৈরাচারী উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন থামাবার কোন অবকাশ নেই। রিলে অনশন শুরু করেছি , দাবি না মিটলে আমরন অনশনের পথে যাব।’’