বাংলার রাস্তায় মহিলাকে নির্মমভাবে মারধর! অভিযুক্ত চোপড়ার তৃণমূল নেতা 'জেসিবি' গ্রেফতার

ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারতে দেখা গিয়েছে তাকে তাজমুল ওরফে "জেসিবি" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার মাকামি টিএমসি নেতা বলে জানা গিয়েছে।

 

Bengal Couple Assault​: রাজ্যে সম্পর্কে লিভ ইন করার অভিযোগে এক দম্পতির উপর নৃশংস হামলার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। এর পরেই তৃণমূলকে তীব্র নিশানা করেছে বিরোধীরা। ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারতে দেখা গিয়েছে তাকে তাজমুল ওরফে "জেসিবি" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার মাকামি টিএমসি নেতা বলে জানা গিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কোর্টের সিদ্ধান্তের পর এই ঘটনা ঘটেছে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাজমুলের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে এবং ৩০ জুন তাকে গ্রেপ্তার করে।

Latest Videos

একই সময়ে, চোপড়ার টিএমসি বিধায়ক হামিদুল রহমান, তাজমুল ওরফে "জেসিবি" কে রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, ওই নারীর কর্মকাণ্ড ‘অসামাজিক’। আর তিনি বলেন তাজমুলের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সংযোগ নেই। এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেপিনাড্ডা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, 'দিদির রাজ্যে মহিলারা সুরক্ষিত নয়'

 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দীঘলগাঁও এলাকার বাসিন্দা এক যুবক-যুবতীর বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই যুবক, যুবতী দুইজনেই বিবাহিত । তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এই নিয়ে আপত্তি জানিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় স্থানীয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টির সমাধান করার জন্য শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই ব্যাপারেই ২৮ জুন এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সালিসি সভা ডাকা হয়। ওই সালিসি সভায় ওই যুবক, যুবতী হাজির হতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত তাজিমুল ইসলাম (এলাকায় JCB নামে পরিচিত) তাদের আক্রমণ করে। ওই দুই যুবক যুবতীকে তাজিমুল ঘুসি মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়ার পর মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো শুরু করে। যুবতীকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে হিচড়ে নিয়ে লাঠিপেটার পাশাপাশি দুই জনকেই লাথি, ঘুসি মারতে থাকে তাজিমুল।আশপাশে প্রায় শ' দুয়েক মানুষ দাড়িয়ে এই ঘটনা দেখলেও তাজিমুলকে আটকানোর চেষ্টা কেউ করেনি। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ওই যুবক, যুবতীকে পেটানোর পর হুমকি দিয়ে তাজিমুল তার দলবল নিয়ে এলাকা থেকে চলে যায়। এদিন সকাল থেকেই ওই মারধরের ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

এলাকাসূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তাজিমুলের হুমকির ভয়ে আতঙ্কের ঘটনার ২ দিন পরেও ওই যুবক, যুবতী কেউই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস পায়নি। এই নিয়ে এলাকার একাধিক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই এই ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তাদের বক্তব্য, এই ব্যাপারে মুখ খুললে তাজিমুলের হাত থেকে নিস্তার নেই। সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই ভিডিও শেয়ার করেছেন। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি সুরজিত সেন জানিয়েছেন, "চোপড়া ব্লকে আইনের শাসন নেই, স্থানীয় বিধায়ক হামিদুল রহমানের শাসন চলে। যে বিধায়ক নির্বাচনের আগে মঞ্চে প্রকাশ্যে বিরোধীদের প্রানে মারার হুমকি দেয়।ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও তে যে যুবককে দেখা গিয়েছে, সে এলাকায় জেসিবি নামে পরিচিত। বিধায়কের হয়ে চোপড়া ব্লক জুড়েই দীর্ঘদিন ধরে সে তান্ডব চালায়। তার আতঙ্কে নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস পর্যন্ত পায়নি।ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।"

তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল জানিয়েছেন, "ওই যুবক, যুবতী দুইজনেই বিবাহিত। তাদের আলাদা সংসার রয়েছে।এলাকার মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। এই নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলো। এই নিয়েই সালিসি সভা। তবে তাজিমুল নামে ওই যুবকের কাজকে আমরা সমর্থন করছি না। পুলিশ এই ব্যাপারে মামলা শুরু করেছে জানতে পেরেছি।"

চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান জানিয়েছেন, "ওই যুবতীর চরিত্র ভালো নয়। সে সমাজকে কলুষিত করছিল। এই নিয়েই সালিসি সভা ডাকা হয়েছে। তবে সেখানে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে একটু বেশি বেশি করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। আমরা এই নিয়ে বকাবকি করেছি।হামলাকারী ওই যুবক আমাদের দলের কোনও পদে নেই। চোপড়া ব্লকে তো কোনও বিরোধী নেই। সবাই আমাদের কর্মী। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।"

এই ঘটনায় ইসলামপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জবি থমাস টেলিফোনে জানিয়েছেন, "আমরা ইনফরমেশন পেয়েছি। এবং পুলিশের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রনোদিতভাবে একটি কেস স্টার্ট করা হয়েছে। যারা যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। আমরা ভিডিও দেখে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আইন যারা নিজের হাতে তুলবে তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রং অ্যাকশন নেওয়া হবে।"

তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবি, বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ওই এলাকার ত্রাস এবং কুখ্যাত অপরাধী। তার নামে খুন, অপহরণ, তোলাবাজি সহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এবং বিভিন্ন অপরাধে একাধিকবার জেলও খেটেছেন তিনি। এবং তিনি ওই এলাকার তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য পদে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

যদিও এই ঘটনার পরে ওই এলাকার বিধায়ক থেকে শুরু করে তৃণমূল জেলা সভাপতি তাজিমুলের সঙ্গে দলের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে।

Share this article
click me!

Latest Videos

'তৃণমূলের শান্তির ছেলেরা...মমতা-বিনীতকে জেলে ঢোকাবই' RG Kar কাণ্ডে বিস্ফোরক Suvendu Adhikari
Daily Rashifal: বুধবারে কেমন থাকবে অর্থনৈতিক অবস্থা, দেখে নিন ১২ রাশির আজকের আর্থিক রাশিফল
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
Suvendu Adhikari Live : নবান্নের সামনে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ধর্না অবস্থান মঞ্চে শুভেন্দু
'কেন্দ্র যদি একটু দয়া দেখায় তাহলে হুগলিতেও মেট্রো চলবে', আশাবাদী Rachana Banerjee