উনুনে বসিয়ে দেন চা। নিজের হাতে বানিয়ে ফেলেন দুধ চা। সেই চা যখন উনুনে ফুটছে, তখন দোকানের পিছনে গিয়ে ঘুরে দেখলেন ছোট্ট ভাতের হোটেলের মেনু।
শান্তিনিকেতন সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক ও প্রশাসননিক কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে পড়ছে মমতার ঘরোয়া সেই রূপ, যে রূপ দেখা যায় কালীপুজোর দিন নিজের বাড়িতে। তখন মুখ্যমন্ত্রী নন, কারোর পিসি, কারোর দিদি হয়ে তদারকিতে ব্যস্ত থাকেন মমতা। বুধবারই দেখা গেল সেরকম ছবি। শান্তিনিকেতন সফরে কবিতীর্থ হাটে দরদাম করলেন শাড়ির, খুঁটিয়ে দেখলেন স্থানীয় মহিলাদের হাতের কাজ। কেমন বিক্রি হচ্ছে, অভিভাবকের মতো খোঁজ নিলেন তারও। এদিন দেখা গেল সোনাঝুড়ির চায়ের দোকানে ঢুকে ঘুরে দেখলেন পুরো জায়গাটা।
শুধু তাই নয়, উপস্থিত সাংবাদিকদের চা দিতে বললেন। একে এত জনের চা। তার উপরে দোকানে মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে খানিক ঘাবড়েই যায় তরুণী চা বিক্রেতা। সেটা বুঝতে পেরে নিজেই দোকানির কাছ থেকে চা, চিনি, দুধ চেয়ে নেন মমতা। তার পরে উনুনে বসিয়ে দেন চা। নিজের হাতে বানিয়ে ফেলেন দুধ চা। সেই চা যখন উনুনে ফুটছে, তখন দোকানের পিছনে গিয়ে ঘুরে দেখলেন ছোট্ট ভাতের হোটেলের মেনু। পর পর সাজিয়ে ডেকচির ঢাকা তুলে তুলে দেখলেন সেখানে সাজানো রয়েছে ভাত, তরকারি। বুধবার বিকেলে একদম ঘরোয়া রূপে ধরা দিলেন মমতা। বলা যেতেই পারে চায়ে পে চর্চার ছবি দেখা গেল এদিন। সঙ্গে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম-সহ অন্য নেতামন্ত্রীরা।
বুধবার বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে সভা করে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি এলাকায় বিশ্বভারতীর প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘শিশু তীর্থ’-এ যান মমতা। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের হাতে উপহার হিসাবে বই খাতা তুলে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর হাতেও স্কুলে চাষ করা সবজি তুলে দেয় পড়ুয়ারা। এরপরেই চায়ের দোকানে ঢুকে উপস্থিত সবার হাতে চা বিস্কুট তুলে দেন মমতা। নির্দেশ দেন এই পুরো টাকা যেন মিটিয়ে দেওয়া হয় তাঁর তরফ থেকে।
জানা যায় দোকান মালিকের মেয়ে পায়েল মাড্ডি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনা শেষ করার পর কাজের জন্য সে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে পায়েল। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তরুণীকে চা পরিবেশনের সাহায্য় করতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। জিজ্ঞাসা করেন, "তোমরা রেশন পাও? বাচ্চারা পড়াশোনা করতে যায়? তোমাদের ঘর কোথায়?" মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের একে একে উত্তর দেন তরুণী। শেষে পা ছুঁয়ে প্রণামও করেন মমতাকে। শুধু চা বিক্রেতা মহিলার সঙ্গেই নন, উপস্থিত মহিলাদের সঙ্গেও একে একে কথা বলে তাঁদের বাড়িঘর, ছেলেমেয়ের খোঁজ নেন মমতা। চায়ের দোকান থেকে পাশের একটি গ্রামে যান মমতা। এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। শিশুদের হাতে তুলে দেন চকলেট।