কলমে বারবার উঠে এসেছিল জলপাইগুড়ি, খ্যাতি সত্ত্বেও শিকড় ভোলেননি সমরেশ মজুমদার

অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, সোমবার বিকেলে এল দুঃসংবাদ। প্রয়াত প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। বাংলা সাহিত্যে যাঁরা নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম সমরেশ মজুমদার।

Web Desk - ANB | Published : May 8, 2023 2:25 PM IST / Updated: May 08 2023, 08:37 PM IST

একটি লেখায় একবার সমরেশ মজুমদার উল্লেখ করেছিলেন, তাঁরা যখন ছাত্র হিসেবে কলকাতায় এসেছিলেন, তখন একটি চালু কথা ছিল, 'উত্তরবঙ্গতুতো ভাই'। আসলে সেই সময় কলকাতার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগব্যবস্থা এখনকার মতো ছিল না। সেই সময় খুব কম বাড়িতেই টেলিফোন ছিল। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। ট্রেন-বাসও এখনকার মতো ছিল না। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য ছিল। সেই কারণেই উত্তরবঙ্গ থেকে যাঁরা কলকাতায় পড়তে আসতেন, তাঁদের মধ্যে সহজেই হৃদ্যতা তৈরি হয়ে যেত। সে কথাই উল্লেখ করেন সমরেশ মজুমদার। উত্তরবঙ্গে তাঁর শিকড়। সেটা নিয়ে তিনি গর্বিত ছিলেন। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কই অনুভব করতেন তিনি। সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেও কোনওদিন নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি তিনি। কলকাতায় থাকলেও, উত্তরবঙ্গই ছিল তাঁর বাড়ি। এই সাহিত্যিকের প্রয়াণে উত্তরবঙ্গ নিজের সন্তানকে হারাল।

দেবেশ রায়ের মতোই সমরেশ মজুমদারের লেখাতেও বারবার উঠে এসেছে উত্তরবঙ্গ। কালজয়ী উপন্যাস 'কালবেলা' হোক বা তাঁর সৃষ্টি করা গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা, প্রথা, মানুষের কথা উঠে এসেছে। 'ম্যাকসাহেবের নাতনি' উপন্যাসে জলপাইগুড়ির যে বর্ণনা রয়েছে, সেটা খুব কম লেখাতেই আছে। কলকাতার তুলনায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে জলপাইগুড়ি যে পিছিয়ে, সে কথাও উল্লেখ করতেন সমরেশ মজুমদার। কিন্তু তারপরেও তিনি নিজের জন্মস্থান নিয়ে গর্বিত ছিলেন। সাতের দশকে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গে নকশাল আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছিলেন প্রয়াত সাহিত্যিক। সেই অস্থির সময়ও বারবার তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। প্রেম যে বিপ্লবের অঙ্গ, সেটাও তুলে ধরেছেন সমরেশ মজুমদার। 'কালবেলা' উপন্যাসে অনিমেষ ও মাধবীলতার প্রেম ও বিপ্লব হাত ধরাধরি করে চলেছে।

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন সমরেশ মজুমদার। ছোটবেলা কেটেছে গয়েরকাটা চা বাগানে ঘুরে বেড়িয়ে, খেলা করে। চা বাগানের শ্রমিকদের অভাব-অনটন, উত্তরবঙ্গের মানুষের সহজ-সরল জীবন দেখে বড় হয়েছেন। সেটা তাঁর উপর প্রভাব ফেলেছিল। ছোটবেলা থেকে সহজ-সরল জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় খ্যাতি তাঁর মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেনি। সারাজীবন মাটির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। অসুস্থতার জন্য শেষদিকে আর খুব বেশি লিখতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর কলম কোনওদিন বিক্রি হয়নি। আজীবন মাথা উঁচু করে চলেছেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবেন বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, বিখ্যাত হয়েছেন। অসংখ্য অনুরাগীর মন ব্যথিত করেই চিরবিদায় নিলেন সমরেশ মজুমদার।

আরও পড়ুন-

প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, উত্তারাধিক থেকে মৌষলকাল- এক অধ্যায়ের সমাপ্তি

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য- রবি ঠাকুরের কবিতাতেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নোবেল কমিটির, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক-মন্তব্য বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের

হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরের মোরে সেনা ক্যাম্পে আটকে কলকাতার চিকিৎসক আহেল বন্দ্যোপাধ্যায়

Share this article
click me!