সংক্ষিপ্ত

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির- এটি রবীন্দ্রনাথের একটি নতুন এবং জাগ্রত ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে। মূল কবিতাটি ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় এবং ১৯১০ সালের গীতাঞ্জলিতে সংগ্রহ করা হয়

তিনি বিশ্বকবি। বাঙালির প্রাণের ঠাকুর। ৯ই মে ২৫ শে বৈশাখ-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁর কবিতাতেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে নোবেল প্রাইজ কমিটি। কমিটির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকীতে চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির কবিতার লাইন ব্যবহার করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই কবিতা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

উল্লেখ্য, ১৮৬১ সালের সাতই মে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির- এটি রবীন্দ্রনাথের একটি নতুন এবং জাগ্রত ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে। মূল কবিতাটি ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় এবং ১৯১০ সালের গীতাঞ্জলিতে সংগ্রহ করা হয় এবং ১৯২১ সাল রবীন্দ্রনাথের নিজের অনুবাদ ইংরেজি সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থর জনপ্রিয় কবিতার গুলির মধ্যে একটি অন্যতম। তাই কবিতার মর্মার্থ অনুধাবন করেই বর্তমান সময়ের জন্য এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে ব্যাখ্যা করছেন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞরা।

ইতিহাসবিদ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্তি রায় বলেন বর্তমান সময়ে দেশ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অন্যায় অবিচার সাধারণ মানুষের ওপর বেড়ে গিয়েছে। ক্ষমতার দম্ভ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবাদী কন্ঠস্বর দমিয়ে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। সেখানেই এই কবিতা যেন প্রেরণার প্রতীক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ অমৃতসূদন ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন এই কবিতা চিরকালীন। ক্ষমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে বরাবর। এই কবিতার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটি দেশ কালের ভেদে সব বয়সের মানুষ, সব বর্ণের মানুষের জন্য মুক্তির পথ দেখায়। আর আজ তো এই কবিতা সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক, যখন একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে সমাজ এগিয়ে চলেছে। তিনি আরও বলেন নোবেল কমিটি নিজেদের টুইটে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতে যে কবিতাটি ব্যবহার করেছে, তাতে সত্যিই তিনি আনন্দিত। এই কবিতা শুধু বাঙালির জন্য নয়, গোটা বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির জন্য লেখা। এটা আন্তর্জাতিক স্তরের ভাবনা, যা ক্ষমতার তলায় পদদলিত ব্যক্তিসত্তাকে জাগিয়ে তোলে।

এই রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ আরও বলেন এটা আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত যে বিশ্বকবির ভাবনা গোটা বিশ্বে আরও ছড়িয়ে দেওয়া। গোটা দেশের মানুষের কাছে তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর কাজ পৌঁছে দিতে হবে। তবে আসল শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা সম্ভব।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন এই মুহুর্ত গোটা মানবতার কাছে গর্বের। মানবতার সবচেয়ে বড় পূজারী ছিলেন কবিগুরু। তাই আজও যাঁরা মানবতার হয়ে, ন্যায়ের হয়ে লড়াই করে, তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেরণার প্রতীক।