
ভারত পাকিস্তানের সরগরম পরিস্থিতিতে কাশ্মীর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ সীমানাবর্তী অঞ্চলের পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত তো অবশ্যই, সেই আঁচ ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের সীমানাতেও। বুধবার সকাল থেকে থমথমে পরিবেশ সিকিম থেকে ডুয়ার্স ও দার্জিলিংয়ে। প্রত্যেকের নজর বারবার ঘুরে ফিরে দেখছে মোবাইল ফোন অথবা টিভি স্ক্রিনে ভেসে ওঠা যুদ্ধ পরিস্থিতির খবরে। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে প্রচুর সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক যুদ্ধস্ত্র নিয়ে সবসময় তৈরী ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী।
দেশ বিদেশের পর্যটক যাদের উত্তরবঙ্গে আগে থেকেই ভ্রমণের পরিকল্পনা করা ছিল বা বুকিং করা ছিল, তাদের ভয় ঘিরেছে ‘চিকেনস নেক’ ঘিরে। ‘চিকেনস নেক’ বা ‘শিলিগুড়ি করিডর’ পাক সেনাদের কাছে সহজ টার্গেট হতে পারে, কারণ ওই এরিয়া ঘিরে রয়েছে চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। পর্যটকেরা ঝুঁকি না নিয়ে বুকিং বাতিল করছেন। তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার প্রচেষ্টায়। ট্রেন, বাস, বিমান যাই পাচ্ছেন জোগাড় করে ফিরছেন বাড়ির পথে।
দমদম নাগেরবাজার এলাকার বাসিন্দা সৌমেন দাস রবিবার সাতদিনের সিকিম ভ্রমণে সপরিবারে গ্যাংটকে গেছিলেন তিনি। সোমবার না-থুলা পাস, ছাঙ্গু উপত্যকায় এবং মঙ্গলবার গ্যাংটক শহর ঘুরে, বুধবার যাওয়ার কথা ছিল উত্তর সিকিমে। কিন্তু সকালে যুদ্ধের খবর মিলতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করে ঘরে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে দাঁড়িয়ে সৌমেনবাবু বলেন, “এই মুহূর্তে সিকিম, শিলিগুড়ি খুবই সেনসিটিভ জায়গা। "চিকেন'স নেক" বলে কথা। আটকে গেলে বিপদে পড়ে যাব। তাই রবিবারের ট্রেনের টিকিট বাতিল করে বাসের টিকিট জোগাড় করেছি।” এই একই উদ্বেগের ছোঁপ অনেকেরই চোখেমুখে।
State Eco Tourism -এর চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “দিনভর বিদেশি পর্যটকদের ফোন এসেছে। প্রত্যেকে চিকেনস নেক এলাকার পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। ওদের অনেকেরই দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণের ইচ্ছে। কিন্তু আশ্বস্ত করলেও ওরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।”
দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় খান্না এই প্রসঙ্গে বলেন, “যুদ্ধের দামামা বাজতেই কয়েক দিন থেকে নতুন বুকিং নেই। যে বুকিং রয়েছে সেগুলো কতটা শেষপর্যন্ত টিকবে, বলা মুশকিল। কারণ, যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।”
গরমে ডুয়ার্সে বুকিং এমনি কিছুটা কম থাকে। তবে এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এবার পর্যটক শূন্য ডুয়ার্স। এ বিষয়ে লাটাগুড়ি রিসর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দে বলেন, “পর্যটকরা ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ওই কারণে বুকিং নেই বললে চলে।”
সারাংশ পাক-ভারত এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পর্যটক শূন্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন উত্তরবঙ্গ। যারা আগে থেকে পাহাড়ে ছিলেন, তারা তড়িঘড়ি ফিরে আসছেন বাড়ি। নতুন করে বুকিং হচ্ছেনা আর।