
Malda Special Durga Puja: স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু পুজো। ৪১৩ বছর ধরে ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে সেন বাড়ির পুজো বর্তমানে দাসগুপ্ত পরিবারের হাতে। জড়িয়ে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনী ও বলি প্রথা। সাধারণত গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রাজা, জমিদাররা সূচনা করেছিলেন ওই পুজোগুলি। শত শত বছর পরেও প্রথা মেনে আজও হয়ে আছে সেই পুজো। এমনই এক ঐতিহ্যবাহী পুজো হল পুরাতন মালদহের সেন বাড়ির দুর্গাপুজো।
৪১৩ বছরের পুরনো এই পুজো। পুরাতন মালদহের বাচামারি এলাকায় পুজোর সূচনা করেছিলেন মহেশ্বর সেন। সেনদের তিনটি পরিবার মিলে করত এই পুজো। তাই এলাকাবাসীর কাছে এটি সেন বাড়ির পুজো নামে খ্যাত। বর্তমানে সেই বংশের আর কেউ নেই। এখন এই পুজো চালিয়ে আসছেন সেখানকারই দাশগুপ্ত পরিবারা দাশগুপ্তদের পাঁচটি পরিবার মিলে করে এই পুজো।
আজও প্রথা মেনে নিয়ম পালন করেই পুজো হয়। প্যান্ডেলের আড়ম্বরতা বা আলোর ঝলকানি হয়তো নেই৷ কিন্তু এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক ইতিহাস। মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন মহেশ্বর সেন। প্রথমে শুরু হয় ঘট পুজো, তারপর পট পুজো এবং শেষে মায়ের মূর্তি তুলে পুজোর প্রচলন হয়।
কথিত আছে, সেই সময় সেন পরিবারের সেবায়েত অশ্বিনী ভট্টাচার্য শালগ্রাম শিলার নিত্য পুজো করতেন। শরৎকালে নিত্য দিনের মতোই সন্ধ্যাবেলা মহানন্দা নদীর ঘাটে যান। হঠাৎ দেখেন, ঘাটের পারে একটি নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। সেই নৌকা থেকে নেমে আসছে এক রমণী। সঙ্গে তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। সেই রমণী এসে সেবায়েতকে জিজ্ঞাসা করেন সেন পরিবারের ঠিকানা।
তখন সেই সেবায়েত তাকে সেন বাড়ি যাওয়ার রাস্তা বলে দেন। কিন্তু তার মনে প্রশ্ন জাগে এই সন্ধ্যায় ঘাটের পারে কে এই রমণী? সাক্ষাৎ দেবী প্রতিমার মত রূপ! এইসব ভাবতে ভাবতে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে যান। তারপর সকালবেলা সেন বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন এরকম কেউ এসেছিল নাকি? কিন্তু, না গত সন্ধ্যায় সেন পরিবারে এরকম কোনও রমণী তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেননি। বা কারও আসার কথাও ছিল না।
এদিকে গত রাতেই মহেশ্বর সেন স্বপ্নে এরকমটাই দেখেছেন। সঙ্গে মা দুর্গা আদেশ দিয়েছেন ওঁর পুজো শুরু করার। পুরোহিতের সন্ধ্যায় ঘাটের পাশেই রমণীকে দেখা এবং সেনবাবুর স্বপ্নাদেশ। উপস্থিত প্রত্যেকেই সেই সময় অবাক হয়ে যায়। তারপর সকলে ছুটে যান সেই ঘাটে। সেখানে দেখতে পান পুজোর পুষ্পপত্র অন্যান্য জিনিস এবং বলির খড়গ পড়ে আছে ঘাটের পারে। আজও নাকি সেই সব জিনিস দিয়েই পুজো হয়ে আসছে। এইভাবে শুরু হয় সেন পরিবারের দুর্গাপুজো।
এই পুজোর বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। মায়ের বোধন হয়ে যায় কৃষ্ণ নবমী তিথিতে। পুজোর পূজারী, মৃৎশিল্পী, ঢাকিরা সকলেই বংশপরম্পরায় এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। ঢাকের সাজে সাজানো হয় দেবী প্রতিমাকে।
এখনও বলি প্রথা চালু রয়েছে এই পুজোয়। ঘাটের পারে পাওয়া সেই খড়গ দিয়েই এখনও নাকি বলি হয়। সপ্তমীতে সাধারণের পাঠা এবং সন্ধি পুজোতে কালো রঙের পাঠা বলির কথা রয়েছে। এছাড়াও নবমীতে বিভিন্ন রঙের পাঠা বলি হয়। আড়ম্বরতা না থাকলেও ভক্তির টানে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজো দেখতে ছুটে আসে বহু মানুষ। আগে নবমীর দিন অনুষ্ঠান হত এখন সেটা বন্ধ। সবথেকে বেশি ভিড় হয় সপ্তমী সকালে। সেদিন সকালে পালকি করে কলা বউকে স্নান করতে নিয়ে যাওয়া হয়। মহানন্দা নদীতে। মালদা শহর সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওইদিন অগণিত ভক্তরা পুজো দিতে আসে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।