
মালদা: মেলেনি ঘর, লক্ষীর ভান্ডার বার্ধক্য ভাতা থেকে শুরু করে রেশন। নিত্যদিন শাকপাতা খেয়ে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছে, সরকারি সাহায্যের আবেদনে পাড়ায় সমাধান ক্যাম্পে গিয়ে বিডিওর কাছে কেঁদে ফেললেন অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি, তাদের চোখের জলেও হুশ নেই প্রশাসনের, তৃণমূল থাকলে কিছু সমাধান হবে না আক্রমণ বিজেপির, সাফাই তৃণমূলের, রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে -
একদিকে যখন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তখন এই রাজ্যে এক অসহায় বৃদ্ধ দম্পতিকে শাক পাতা খেয়ে কাটাতে হচ্ছে দিন। মেলেনি আবাস মমতা সরকারের যোজনার ঘর, লক্ষীর ভান্ডার থেকে শুরু করে বার্ধক্য ভাতা। এমনকি রেশন পর্যন্ত মেলে না। পাড়ায় সমাধান ক্যাম্পে গিয়ে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের সামনে অঝোরে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু তাদের সেই আবেদন কর্ণপাতই করলেন না বিডিও।
এদিন আবার ঘটা করে সেই মডেল ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে ছিলেন জেলাশাসক এবং রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের সচিব। এলাকার সব থেকে দুস্থ পরিবার বলছেন প্রতিবেশীরাও। প্রশাসন এবং জন-প্রতিনিধিদের ভূমিকায় বড় প্রশ্ন চিহ্ন? 'তৃণমূল থাকলে কোনও সমস্যারই সমাধান হবে' না খোঁচা বিজেপির। শুরু হয়েছে তরজা।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রারিয়াল গ্রামের বাসিন্দা কলীমুদ্দিন বয়স ৬৪। বয়সের ভারে আর কাজ করতে পারেন না। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে। প্রায় ১৫ বছর আগে ভেঙে গেছে ঘর। সেই ভগ্ন প্রায় জরাজীর্ণ ঘরে দিন কাটান এই পরিবার। কোনও রকম সরকারি সাহায্য পান না তারা। তার স্ত্রী সামেনুর বিবি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান না। মেলেনি আবাস যোজনার ঘর। বার্ধক্য ভাতাও পাননি কলিমুদ্দিন। শাক পাতা খেয়ে অভুক্ত অবস্থায় কোন রকমে হচ্ছে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
এদিন এলাকার রারিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজ্য সরকারের পাড়ায় সমাধান ক্যাম্প চলছিল। যে শিবির পরিদর্শনে এসে ছিলেন জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া, রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের সচিব সৌমিত্র মোহন। অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি ভেবে ছিলেন এই সমাধান শিবিরে গেলে হয় তো তাদের সমস্যার সমাধান হবে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌমেন মন্ডলের কাছে গিয়ে নিজেদের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তারা। কিন্তু অসহায় এই দম্পতির চোখের জলেও দৃষ্টি আকর্ষণ হয়নি প্রশাসনের।
বিডিও কার্যত তাদের আবেদন কর্ণপাত করেননি। ওই দম্পতির প্রতিবেশীরাও জানাচ্ছেন তাদের অসহায়তার কথা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আর কত গরিব হলে মিলবে সরকারি সাহায্য। এই পরিবারের দিকে কেন নজর নেই প্রশাসন জন-প্রতিনিধিদের। তবে সরকারী সাহায্য, সরকারের বিভিন্ন শিবির,এই পরিষেবা কাদের জন্য। এই অসহায়তা দেখে আদৌ কী টনক নড়বে প্রশাসনের? না কি শুধুমাত্র ঘটা করে এই সব সরকারি শিবিরে গিয়ে ছবি তুলবেন আধিকারিকরা। অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক বিডিও সৌমেন মন্ডল ক্যামেরার সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সমগ্র ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ বিজেপির।