গঙ্গা ভাঙনে স্থায়ী সমাধান চাই, দুয়ারে সরকার থেকে মন্ত্রীর সামনে - সর্বত্র একই দাবি নদী তীরবর্তী মানুষদের

নদী ভাঙ্গন সমস্যার স্থায়ী সমাধান না তো ভোট বয়কট। মন্ত্রীর সামনে সাফ জানিয়ে দিলো ভাঙ্গন কবলিত মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। মন্ত্রী তাঁদের স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

 

Saborni Mitra | Published : Nov 4, 2022 1:12 PM IST

নদী ভাঙনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। তা নাহলে তারা আর ভোট দেবে না। দিনের পর দিন আতঙ্কে তারা বাস করতে পারবে না। এবার সরাসরি মন্ত্রীর সামনেই জানিয়ে দিয়ে নদী ভাঙনে ভিটে মাটি সব হারানোর আশঙ্কায় দিন গোনা মালদার রতুয়ার বাসিন্দারা। তারা আরও জানিয়েছে, নদী ভাঙের কারণে ইতিমধ্যেই অনেকর ভিটে মাটি , জমি চলে গেছে গঙ্গাগর্ভে। এই অবস্থায় সব হারিয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বাকিরাও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আর প্রশাসনের কাছ থেকে তারা এই উদাসীন আচরণ সহ্য করবে না। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পেও উঠল ভাঙনের প্রসঙ্গ।

বছরের পর বছর একই সমস্যা। কিন্তু নেই স্থায়ী কোন সমাধান। প্রত্যেক দিনই আসঙ্কায় কাটাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের। সেই ভোগান্তি কারণেই এবার মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভের বিস্ফোরণ। সমস্যার সমাধান না হলে ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি। শুধু রতুয়া নয়, এই ঘোষণা ভাঙন দুর্গত মানিকচক, এমনকি বিহার লাগোয়া এলাকাগুলির বাসিন্দাদেরও৷ যদিও মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দুর্গতদের জন্য তাঁরা ভাবছেন ৷ কিছু একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে ৷ এদিন এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন রতুয়ার কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুলে উপস্থিত মানুষজন ৷

এদিন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে গঙ্গার ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দটোলা পঞ্চায়েত এলাকায় যান রাজ্যের সেচ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ সঙ্গে ছিলেন দুই বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি ও সমর মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত জেলা শাসক বৈভব চৌধুরি, পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব, রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো, রতুয়া থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত সহ সেচ দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকেরা৷ দুর্গত এলাকায় গিয়েই মন্ত্রী গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন৷ গঙ্গার ভাঙনে একের পর এক এলাকা বিপন্ন হলেও সরকার কেন নদীর ভাঙন আটকাতে স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা জানতে চান বিপন্ন মানুষ৷ তাঁদের প্রশ্নবাণ থেকে কোনওমতে রক্ষা পান মন্ত্রী৷ ভাঙন পরিস্থিতি দেখে সপার্ষদ চলে আসেন কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুলে৷ সেখানে তখন চলছিল দুয়ারে সরকার ক্যাম্প৷ সেখানেও কার্যত দুয়ারে প্রশাসনের আসর বসে যায়৷

ভাঙন দুর্গতদের উদ্দেশ্যে সাবিনা বলেন, ‘যেহেতু আমি সেচ দপ্তরের মন্ত্রী, তাই গঙ্গার ভাঙন আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ দুর্গত মানুষজনের জন্যও আমি চিন্তিত৷ তাঁদের কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেটাই সবসময় মাথায় ঘুরছে৷ আমি এই দুর্গত মানুষদের বাঁচাতে চাই৷ এনিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি৷ এর জন্য কোনও একটা ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি৷ কিন্তু একটি ক্ষেত্রে আমরাও সমস্যায় পড়েছি৷ আগে নদীর ভাঙনে তলিয়ে যাওয়া জমি কখনও চর আকারে জেগে উঠলে সেই জমির মালিক হতেন ভাঙন দুর্গতরাই৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেই আইন বদলে ফেলেছে৷ এখন জেগে ওঠা চরের জমির মালিক সরকার৷ কিন্তু একটা কথা বলতে পারি, মানুষ যখন চরম বিপদে পড়ে, তখন সে আর আইন দেখে না৷ কারণ, মানুষের জন্য আইন৷ আইনের জন্য মানুষ নয়৷ তবু কেউ যেন কখনও আইন নিজের হাতে তুলে না নেন৷ আমরা আপনাদের বসবাসের জন্য ঠিক কোনও না কোনও ব্যবস্থা করব৷ দুর্গতরা যাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আর্থিক সাহায্য পায়, তার জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ কেন্দ্র সেই সাহায্য না করলে আমি আপনাদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করব৷’

যদিও মন্ত্রীর কথায় ভরসা নেই ভাঙন উদ্বাস্তু আবু জাহারের৷ গঙ্গার তাণ্ডবে ৫-৭ বার ভিটেছাড়া হয়েছেন৷ রতুয়ার বাবলাবোনা থেকে সরে যেতে হয়েছে মানিকচকের ভূতনিতে৷ এদিন মানিকচকের আরও অনেকের সঙ্গে তিনিও সভায় এসেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘এতদিন তৃণমূলকে ভোট দিয়ে এসেছি৷ সাবিত্রী মিত্রকে জিতিয়েছি৷ কিন্তু ভাঙনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেলেও কোনও মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি কিংবা নেতারা আমাদের কাছে আসেনি৷ আমাদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি৷ আজ ভোট চাইতে এরা এখানে এসেছে৷ একটা কথা সাফ জানিয়ে দিচ্ছি, আগে গঙ্গাকে বাঁধতে হবে৷ নইলে আমরা কেউ এবার ভোট দেব না৷ ভাঙন বিপন্ন সব মানুষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই সিদ্ধান্ত থেকে আমাদের কেউ সরাতে পারবে না৷’

একই বক্তব্য আরেক ভাঙন বিধ্বস্ত রতুয়ার ছবিলালটোলার শোভা চৌধুরীরও৷ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই গরিব মানুষ৷ এর আগে অনেকবার গঙ্গা আমাদের ঘর কেড়েছে৷ নদী ফের ঘরের কাছে চলে এসেছে৷ আমরা কোথায় যাব? কেউ আমাদের দিকে তাকায় না৷ তাই আমরা জোট বেঁধে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গঙ্গাকে না বাঁধা হলে এবার আমরা কেউ ভোট দেব না৷ নদীকে বাঁধা হলে আমরা মমতা দিদিকেই ভোট দেব৷’

এই ভাঙ্গন সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রত্যেক বছর আসে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ভাঙ্গনের কবলে বছরের পর বছর তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি,জমি। কেন্দ্র এ নিয়ে রাজ্যকে দোষারোপ করে রাজ্য পাল্টা কেন্দ্রকে। কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান শেষ পর্যন্ত হয় না।

আরও পড়ুনঃ

ধর্ষণের বিচার করার জন্য ডেকে প্রেমিককে সঙ্গে হাত মিলিয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ, কাঠগড়ায় তৃণমূলের কাউন্সিলর

সেনাবাহিনীর জমিতে কেলেঙ্কারি, কলকাতা ও সল্টলেকে ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান ইডির

কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলা, বিজেপি কাঠগড়ায় দাঁড় করাল তৃণমূলকে

 

Share this article
click me!