মঙ্গলবার আদালতে ধৃত অয়ন শীল সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছে ইডি। তাঁদের দাবি ২০২১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চাকরি বিক্রি করেছেন অভিযুক্ত অয়ন শীল।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে আসছে একের পর এক নতুন নাম। তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে দুর্নীতির অঙ্ক ও ব্যাপ্তি। প্রায় রোজই উঠে আসছে চমকে দেওয়ার মতো একাধিক তথ্য। মঙ্গলবার আদালতে ইডির দাবি শুধুমাত্র প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। আগামী দিনে এই অঙ্ক আরও বাড়বে বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার। পাশাপাশি দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে জড়িত কুন্তল ঘোষ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন শীলরাও। মঙ্গলবার আদালতে ধৃত অয়ন শীল সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছে ইডি। তাঁদের দাবি ২০২১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চাকরি বিক্রি করেছেন অভিযুক্ত অয়ন শীল।
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের গ্রেফতারির পর থেকেই উঠে আছে একের পর নতুন তথ্য। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু স্কুলে নয় পুরসভাতেও নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা। ইতিমধ্যেই বিষয়টি সিবিআইকে জানানো হয়েছে। ইডির আরও দাবি মানিকের সঙ্গে যোগসাজোশ করেই প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছিল অয়নরা। ইডি সূত্রে আরও জানা যায় পুরসভায় চাকরির জন্য এজেন্ট মারফত তালিকা আসত অয়নের কাছে। মোট ৬০টি পুরসভায় অন্তত ৫ হাজার চাকরি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার অয়নের ল্যাপটপ, মোবাইল ঘেটে মিলল একাধিক এজেন্টের নাম ও চাকরি প্রার্থীদের তালিকাও। এখনও পর্যন্ত চারজন এজেন্টের নাম জানা গিয়েছে। অয়নের মোবাইলে তপনদা, লালদা, কানুদা, এমডি- এইরকম নাম থেকে তালিকা আসত চাকরিপ্রার্থীদের। ইডি সূত্রে খবর, তপনদা নামের এজেন্টের কাছ থেকে ১৫ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম এসেছিল। লালদা পাঠিয়েছিলেন ৬৪ জনের নাম৷ কানুদা একাই ৯৬ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা দিয়েছিলেন এবং এমডি ৪৩ জনের তালিকা পাঠিয়েছিলেন অয়নকে।
অন্যদিকে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে এবার উঠে এল নতুন নাম। রবিবার অয়নকে গ্রেফতার করার আগে তাঁর সল্টলেকের অফিসে ৩৭ ঘন্টার ম্যারাথন তল্লাশি চালায় ইডি আধিকারিকরা। সেখানেই ইডির হাতে এসেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি। এবার অয়ন শীলের সূত্র ধরে সামনে এল আরও এক রহস্যময়ীর নাম। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের শুরু থেকেই বার বার উঠে এসেছে মহিলাদের নাম। পার্থর অর্পিতা, গোপালের হৈমন্তী, কুন্তলের সোমার পর এবার অনয় শীলের সূত্রে মিলল আরও এক মহিলার হদিশ। কিন্তু কে এই রহস্যময়ী?
ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে অয়নকে গ্রেফতার করে তাঁর ফোনের হোয়াটস্যাপ চ্যাট ঘেঁটে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডির হানা দেওয়ার আগেই অয়নকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল ওই মহিলা। অয়নকে হোয়াটস্যাপে মেসেজ করে বলা হয়েছিল,'পালিয়ে যাও। জিনিসপত্র সরিয়ে দাও। ইডি আসতে পারে।' এই চ্যাট দেখে চোখ কপালে উঠেছে ইডি অফিসারদের। কিন্তু এবিষয় মুখ খোলেননি অয়ন। ইতিমধ্যেই ওই মহিলার খোঁজ শুরু করেছে ইডি। জানা যাচ্ছে মহিলার নাম শ্বেতা চক্রবর্তী। পেশায় মডেল এবং পাশাপাশি রাজ্যের একটি পুরসভায় কর্মরত তিনি। অয়নের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বান্ধবী শ্বেতা। তবে অয়নের কাছ থেকে এখনও এবিষয় পরিষ্কার করে কিছু জানা যায়নি। কীভাবেই বা ইডি হানার সতর্কবার্তা অয়নকে দিলেন শ্বেতা সেবিষয়ও ধোঁয়াশা কাটেনি।
তবে এখানেই শেষ নয়। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে শ্বেতার অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। অয়নের ৩২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটি রয়েছে শ্বেতারও। শুধু তাই নয় শ্বেতার নামে রয়েছে একটি হন্ডা সিটি গাড়িও। ইডির সন্দেহ এই বিলাসবহুল গাড়ির টাকা আসে অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে শ্বেতার অ্যাকাউন্টে ট্রেনসফার হওয়া ২৫ লাখ টাকা থেকেই।
আরও পড়ুন -
ছবি বিভ্রাট! অয়নের বান্ধবী কামারহাটির শ্বেতার সঙ্গে গুলিয়ে গেল গড়িয়ার শ্বেতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২ দিনের জন্য ধর্নায় বসছেন, কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রীর
এজেন্ট মারফত চাকরিপ্রার্থী তালিকা আসত অয়নের কাছে, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে রহস্য