সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় যে এইচআইভি পজিইভ হওয়ার কারণে কাউকে ছুটিতে পাঠানো যায় না। এই ঘটনার পরই ফের স্টাফ রুমে ডাক পান সৌমিত্র।
এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার জেরে কর্মস্থল থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক সৌমিত্রকে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। স্কুলের সমালোচনায় সরব হন অনেকেই। ঘটনাটি প্রকাশিত নানা সংবাদমাধ্যমেও। স্কুলের সিদ্ধানের তীব্র নিন্দা করেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকেও স্কুলের কাছে আবেদন জানানো হয়। অবশেষে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে নিষ্পত্তি হয় গোটা ঘটনার। স্কুল কর্তৃপক্ষের আচরণের কথা প্রকাশ্যে আসার পরই পদক্ষেপ নেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় যে এইচআইভি পজিইভ হওয়ার কারণে কাউকে ছুটিতে পাঠানো যায় না। এই ঘটনার পরই ফের স্টাফ রুমে ডাক পান সৌমিত্র।
সদ্যই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এইভআইভি পজিটিভ সৌমিত্র-সুনীতা। এরপরই দুঃসংবাদ। স্কুলের চাকরির থেকে ৯০ দিনের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয় তাঁকে। চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন সৌমিত্র। অবশেষে নতুন চাকরির প্রস্তাব পেলেন তিনি। জানা যাচ্ছে কল্লোল ঘোষ নামের এক সমাজ কর্মীই এই চাকরির প্রস্তাব দেন সৌমিত্রকে। সোনারপুরে এইআইভি পজিটিভ এবং পথশিশুদের নিয়ে একটি স্কুল চালান তিনি। সেখানেই সৌমিত্রকে পড়ানোর কথা বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে সৌমিত্রকে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা সৌমিত্রকে চাকরি থেকে বারিল করেননি। তিনি স্কুলে পড়ালে শিশুর ক্ষতি হবে কিনা তা নিয়ে চিকিৎসক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। তবে স্কুলের আচরণে যথেষ্ট মর্মাহত সৌমিত্র। নতুন চাকরির কথাও বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পেশায় স্কুল শিক্ষক সৌমিত্রকে এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার অজুহাতে ৯০ দিনের ছুটিতে পাঠিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় রীতিমত বিস্মৃত নবদম্পতি। এইচআইভি নিয়ে এত সচেতনতার প্রচারের পরও কীভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে পারল সে বিষয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
ছোটবেলায় ডিপথেরিয়ার ইঞ্জেকশন নিতে গিয়ে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হন সৌমিত্র। অন্যদিকে সুনীতার মা বাবা দু'জনেই মারা গিয়েছিলেন এইচআইভিতে। মেদিনীপুরের একটি হোমে বেড়ে ওঠা সুনিতার। দু'জনেই চিকিৎসা করাতে আসতেন মেডিক্যাল কলেযেঁ। সেখানেই প্রথম দেখা সৌমিত্র-সুনিতার। সেখান থেকে প্রেম। অবশেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সমাজের প্রতিকূলতাকে হারিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাঁরা। কিন্তু বিয়ের পরই চাকরিক্ষেত্রে বড় সমস্যায় পড়তে হল সৌমিত্রকে। তাঁর এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই স্কুলের চাকরি থেকে ৯০ দিনের ছুটিতে পাঠানো হয় তাঁকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি পড়ুয়াদের অভিভাবকরা সৌমিত্রর স্কুলে পড়ানোর বিষয়টা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। সেই কারণেই তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হল।
স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে হতবাক নবদম্পতি। তবে আইনানুযায়ী এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার অজুহাতে কাউকে কর্মস্থল থেকে সরানো যায় না। সৌমিত্র-সুনীতা এই মুহূর্তেই আইনি পথে হাঁটবেন কিনা সে বিষয় এখনও কিছু জানা যায়নি। ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজকর্মীরাও। সৌমিত্রর স্কুলের সামনে একটি সচেতনা শিবিরেরও আয়োজন করার কথা বলে বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন -
এইআইভি পজিটিভ হওয়ায় পড়তে হয়েছিল চরম বিপাকে, অবশেষে নতুন চাকরির প্রস্তাব পেলেন সৌমিত্র
এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার অজুহাতে ৯০ দিনের ছুটিতে পাঠানো হল সৌমিত্রকে, বিস্মৃত নবদম্পতি
পাহাড়ে হচ্ছে না বনধ, মমতার হুঁশিয়ারির পরই বনধ স্থগিত রাখলেন বিনয় তামাংরা