স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য সরকারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মঙ্গলবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্ট ৩১ মে-র মধ্যে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। তিনি তখনই বলেছিলেন যে ৩০ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। সেই অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে এসএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারই পরীক্ষার্থীদের জন্য আবেদন ও প্যানেল প্রকাশের সম্ভাব্য সময়সীমা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এসএসসির প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ১৬ জুন থেকে এবং শেষ তারিখ ১৪ জুলাই। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে হলে সাধারণ ও ওবিসি শ্রেণির প্রার্থীদের আবেদন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। তফসিলি জাতি (এসসি), উপজাতি (এসটি) এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি নির্ধারিত হয়েছে ২০০ টাকা। এই ফি জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৪ জুলাই রাত ১২টার মধ্যে।
২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে গিয়েছে, যার ফলে ২৫,৭৩৫ জন চাকরি হারিয়েছেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়েছে। যেকোনো ধরনের অনিয়ম রুখতে এবার এসএসসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা প্রার্থীদের মূল্যায়িত উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী চাকরি হারানো প্রার্থীদের এই নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন, সেই প্রার্থীরা নতুন করে পরীক্ষায় বসতে অনিচ্ছুক হলেও, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদেরও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের স্বার্থে সরকার লড়াই চালিয়ে যাবে।
বুধবার মধ্যরাতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নতুন পরীক্ষার নিয়মাবলি প্রকাশ করেছে। এই নতুন নিয়মে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং শ্রেণি নেওয়ার দক্ষতার উপর।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী:
লিখিত পরীক্ষা হবে মোট ৬০ নম্বরের, যা আগে ছিল ৫৫ নম্বর।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর দেওয়া হবে, যেখানে আগে ছিল ৩৫ নম্বর।
ইন্টারভিউ আগের মতোই থাকবে ১০ নম্বরের।
শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবার থেকে মূল্যায়িত হবে এবং এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ নম্বর বরাদ্দ।
লেকচার ডেমোস্ট্রেশন বা শ্রেণি নেওয়ার দক্ষতা প্রদর্শনের জন্যও থাকবে ১০ নম্বর।
এই শেষ দুটি— শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং লেকচার ডেমোস্ট্রেশন— নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে এবং মিলিয়ে মোট ২০ নম্বর রাখা হয়েছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত হলে তাঁরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন। তবে তফসিলি জাতি (এসসি), জনজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) প্রার্থীরা রাজ্য সরকারের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বয়সের ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় পাবেন।