বাম আমলে এসএসকেএম-এ মদনই ছিলেন শেষ কথা। তৃণমূল আমলেও বজায় ছিল সেই প্রতিপত্তি।
এসএসকেএমের ঘটনায় প্রকাশ্যে মদন-মমতা সংঘাত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসার জেরে এবার রাজ্য সরকারকে একহাত নিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক। প্রয়োজনে দল ছাড়ার কথাও বলেছে তিনি। এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ দলীয় কর্মী ছিলেন তিনি। এসএসকেএম-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই বিরুদ্ধাচারণ করলেন মদন মিত্র। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে মদন বলেন,'কুৎসার রাজনীতি যদি লিখতে হয় আমার লেখা হবে বেস্ট সেলার।' পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট জানান, এই ঘটনার জন্য প্রয়োজনে দল ছাড়তেও প্রস্তুত তিনি। তাঁর কথায়,'মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা যাবে না। আমি ওঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যিনি আহত হয়েছেন তিনিও স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর পাশে দাঁড়াতেই আমি এসএসকেএমে গিয়েছিলাম। এটা আমার অপরাধ হয়ে থাকলে আমায় তাড়িয়ে দিন, চলে যাব। যা বলববেন মেনে নেব।'
এখানেই শেষ নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের কেন সাসপেন্ড করা হবেনা সেই নিয়েও রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় সরব হন মদন। এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টার কারোর একচ্ছত্র নয় বলেও দাবি করেন তিনি। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে মদনের দাবি পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি। রোগীকে ভর্তি না নেওয়া গেলেও সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া উচিত। ২৪ ঘণ্টা ট্রমা কেয়ার সেন্টার খোলা থাকার পরেও রোগীকে দেখা হল না কেন? তিনি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন ধরেননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও জানান, যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অরূপ বিশ্বাসও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার মেসেজ করে বলেন, রোগীকে দেখা হয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁকে ভর্তি করানোর ক্ষমতা নেই।
উল্লেখ্য বাম আমলে এসএসকেএম-এ মদনই ছিলেন শেষ কথা। তৃণমূল আমলেও বজায় ছিল সেই প্রতিপত্তি। সারদাকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে নিজেও ভর্তি ছিলেন এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে। তখনও তাঁর নিয়ন্ত্রণেই ছিল এসএসকেএম। কিন্তু পরে হাসপাতালের ‘দায়িত্ব’ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মদনকে। তাঁর জায়গায় আসেন ফিরহাদ হাকিম। তবুও প্রতাপ কমেনি মদনের। শুক্রবার রাতে ধাক্কা খেল সেই অলিখিত 'কতৃত্ব'। এসএসকেএম থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এবার রাজ্যের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন তিনি। তিনি বলেছেন,'দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ট্রমা কেয়ারে সকলের জায়গা পাওয়ার কথা। মোদীর বাপের বাড়ির লোক এলেও ভর্তি করতে হবে। এটা পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার।পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ট্রমা কেয়ার সেন্টার। কারও বাপের ট্রমা কেয়ার সেন্টার নয়।' গত দু'দিন ধরে চলতে থাকা এই বিতর্ক যেন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দকেই আরও একটু উস্কে দিল।