ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়ে এখনও যুযুধান তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। তৃণমূল নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর যেমন গোটা ঘটনার নিন্দা করেন। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের নিশানায় অভিষেক ।
মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সংঘর্ষের পর এখনও উত্তপ্ত ঠাকুরনগর। দুই যুযুধান রাজনৈতিক দল এখনও পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই চলছে। অন্যদিকে রবিবারের ঘটনার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতে হয়ে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য পুলিশ। আক্রান্ত চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে সেখানেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার বিএমওএচও একটি পৃথক মামলা দায়ের করেছেন। এছ়ড়াও আরও দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যপুলিশের অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনী পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছে। আর সেই কারণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।
ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়ে এখনও যুযুধান তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। তৃণমূল নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর যেমন গোটা ঘটনার নিন্দা করেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ওপরও অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ গতকালের ঘটনার জন্য সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন অভিষেক পাঁচ মিনিটে সাফা করে দিয়ে মন্দিরে ঢুকতে পারত । কিন্তু অভিষেক সৌজন্য দেখিয়েছেন। তাই জোর করে মন্দিরে ঢোকেননি।
দিলীপ ঘোষের মন্তব্য
'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে সুপার সিএম মনে করছেন। সিএম তো রয়েছে। তার ওপরে চমকে ধমকে উনি সবাইকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেছেন।'দিলীপ ঘোষের আরও প্রশ্ন এই অধিকার অভিষেককে কে দিয়েছে। অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলে, মন্দিকে কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে সেটা সম্পূর্ণ ট্রাস্টের বিষয়। অভিষেক অনুমতি না নিয়ে কেন সেখানে গিয়েছিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দিলীপ। পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাজার হাজার পুলিশ নিয়ে ঘুরছেন। দিলীপ বলেন, 'এতদিন পরে কেন ঠাকুরের কথা মনে পড়ল? ঠাকুরবাড়ি যেতে পারতেন। নিজের বাড়ির কাছেই কালীঘাট, সেখানে কতবার গিয়েছেন তিনি?' এই প্রশ্নও করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ঠাকুরবাড়ি গিয়ে মাথা ঠুকলেই মতুয়া ভোট পাওয়া যাবে না। মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তৃণমূলের দাবি
অন্যদিকে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, কুণাল ঘোষ ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। মমতাবালা ঠাকুর বলেন, এই ঘটনা অত্যান্ত নিন্দাজনক। তিনি আরও বলেন যে উদ্দেশ্য নিয়ে হরিঠাকুর মন্দির তৈরি করেছিলেন সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মতুয়াদের নিয়ে বিজেপি জাতপাতের রাজনীতি করছে। এখানেই শেষ নয়, সাংবাদিক সম্মেলন মমতাবালা ঠাকুর পারিবারিক বিবাদের কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, মঞ্জুল ঠাকুর আর শান্তনু ঠাকুর তাঁকে সর্বদা ভয় দেখান। তাঁর ওপর অত্যাচার করেন। তিনি আরও বলেন মতুয়াদের নমাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভুল বোঝান হচ্ছে। ভোট আসলে সেই বিষয়টা বাড়ে।
মমতাবালা ঠাকুর আরও বলেন মন্দিরে তাঁরা বা কোনও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ কোনও দিনও জুতো পায়ে প্রবেশ করেননি। কিন্তু গতকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী জুতো পরে মন্দিরে প্রবেশ করে। তিনি আরও বলেন আগে তাঁর স্বামীকে খুনের হুমকি দিত শান্তনু ঠাকুর। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কুণাল ঘোষ ও শশী পাঁজা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। কুণাল বলেন অভিষেক যদি চাইত তাহলে পাঁচ মিনিটে জোর করে মন্দিরে ঢুকতে পারত। কিন্তু অভিষেক তা করেনি। অন্যদিকে শশী পাঁজা বলেন অভিষেকের মন্দিরে যাওয়া নিয়ে কোনও রাজনীতি ছিল না তৃণমূলের। একজন ভক্ত মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে আটকে দিয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে চাইছে।
আরও পড়ুনঃ
কীভাবে ভরা বাজারে ডাচ ইউটিউবারকে হেনস্থা আর মারধর? দেখুন সেই ভাইরাল ভিডিও
'ঠাকুরবাড়িতে মোতায়ন ৫ হাজার পুলিশ কর্মী গুন্ডাদের নিরাপত্তা দিয়েছে', বিস্ফোরক শান্তনু ঠাকুর