
আবার তোলাবাজির অভিযোগ। এবার ব্যান্ডেলে। কাঠগড়ায় সেই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। তবে এবার তৃণমূল নেতার জুলুমবাজির চাপ সহ্য করতে না পেরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। ঘটনার সূত্রপাত নতুন বাড়ি তৈরি করাকে কেন্দ্র করে। হুগলির ব্যান্ডেল এলাকায় নতুন বাড়ি তৈরি করছিলেন বছর ৬০এর এক ব্যক্তি মহম্মদ ফরির। কিন্তু সেই বাড়ি তৈরির জন্য তোলা-র টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা দীনেশ যাদব। তেমনই অভিযোগ মৃতের পরিবারের।
ঘটনারসূত্রপাতঃ
পরিবারের দাবি, ব্যান্ডেলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল নেতা দীনেশ যাদব নতুন বাড়ি তৈরির জন্য ফকির পরিবারের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ‘তোলা’ দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায়, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় দীনেশ তাঁর দলবল নিয়ে চড়াও হন মহম্মদ ফকিরের বাড়িতে। সেই সময় মারধরের ঘটনা না ঘটলেও হুমকি, বচসার মত ঘটনা ঘটেছিল। পরিবারের দাবি এই ঘটনায় প্রবল মানসিক চাপে পড়েন ফকির। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁকে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরিবারের অভিযোগঃ
ফকিরের ছেলে মহম্মদ আমনের অভিযোগ, এখানেই থেমে থাকেননি দীনেশ। হাসপাতালে ফকির চিকিৎসাধীন থাকাকালীনও দীনেশ যাদব বারবার তাঁদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিতে থাকেন। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের নির্মীয়মান বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এই খবর শুক্রবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছাতেই মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন মহম্মদ ফকির এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ফকিরের ছেলে আমনের বক্তব্যঃ
“তোলার টাকা দিতে না পারাতেই বাবাকে মরতে হল। এটা সরাসরি হত্যার চেষ্টা। আমি চাই, দীনেশ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। পুলিশ যেন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, গত ২০ জুলাই ব্যান্ডেল ফাঁড়িতে দীনেশ যাদবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।
তৃণমূল নেতার পাল্টা দাবিঃ
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা দীনেশ যাদব অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমি কারো থেকে তোলা চাইনি, বাড়ি ভাঙিনি, কেউ মারা গেলেও তার জন্য আমি দায়ী নই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে বদনাম করার চেষ্টা চলছে।” তিনি গোটা ঘটনায় চক্রান্ত দেখছেন বলেও জানিয়েছে।
চাঞ্চল্য এলাকায়ঃ
এই ঘটনার জেরে ব্যান্ডেল ও আশপাশের এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ হোক, না হলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে। এখন দেখার, পুলিশ ও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কী পদক্ষেপ নেয়। কারণ এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর পিছনে যদি সত্যিই দলেরই এক নেতার ভূমিকা থেকে থাকে, তবে তা দল ও প্রশাসন—উভয়ের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন ফেলবে।