পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি উঠেছে। রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই বিরোধীদের। আবার যৌথ মঞ্চও নিরাপত্তার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সরব হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগে থেকেই বিরোধীরা এই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সরব হয়েছে। এই একই দাবি জানিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের সরকারি কর্মী- বিশেষত যারা ডিএ এর দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। কিন্তু কেন? শুধুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব থাকা রাজ্য পুলিশের ওপর অনাস্থ নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণও।
১. পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যর চেনা ছবি বদলে গিয়েছে। ভোট সন্ত্রাসের ছবি স্পষ্ট হচ্ছে গ্রাম বাংলায়। মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে। কখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম, কখনও বিজেপি। কখনও আবার কংগ্রেস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনোনয়ন দাখিলের ভিডিওগ্রাফি ও ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে।
২ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথের সংখ্যা বেড়েছে। সেক্ষেত্রে এক দফায় সুস্ঠুভাবে ভোট করাতে প্রয়োজন প্রায় দেড় লক্ষ পুলিশ কর্মী। রাজ্যে নির্বাচনী কেন্দ্রের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৩৬টি। একেকটি কেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকে সেক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে যদি ২ জন করে সশস্ত্র পুলিশ ও লাইন ঠিক করার জন্য একজন করে লাঠিধারী পুলিশ দেওয়া হয় তাহলে প্রয়োজন প্রায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ২৭২ পুলিশ কর্মী। অন্যদিকে ভোটের আগের দিন থেকেই নাকা চেকিং, রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে থাকা ও নানাবিধ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কর্মীদের প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের হাতে অত পুলিশ কর্মী নেই। সূত্রের খবর রাজ্যে পুলিশ কর্মীর সংখ্যা ৮০ হাজার।
৩. ভোটের আগে থেকেই বিরোধীদের দাবি ছিল পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। প্রতিটি বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। বিষয়টি এখন আদালতের বিষয়ে। কিন্তু শুধু বিরোধী নয়, রাজ্য সরকারের কর্মীদেরও একাংশ ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়ে সরব হয়েছে।
৪ ডিএ-এর দাবিতে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল সেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও একটি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তার দাবিকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর কথা বলেছে।
৫. যৌথমঞ্চের দাবি রাজ্যের প্রায় ৭০ হাজার বুথে ভোট গ্রহণ হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেখানে রাজ্যে পুলিশ কর্মীর সংখ্যা ৪৪ হাজার। দুটি বুথে একজন পুলিশ কর্মী থাকবে এমন পরিস্থিতি নেই। তাদের দাবি রাজ্যের বেশ কিছু বুথ নিরাপত্তাবাহিনী অবস্থায় থাকবে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সরব আন্দোলনকারীরা।
৬. অন্যদিকে বিরোধীদের দাবি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে ভোট সন্ত্রাসের বলি ছিল ১৮ জন। আর সেই ঘটনা যাতে এবারও না ঘটে তার জন্যই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি উঠেছে।'
৭. রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি রাজ্য পুলিশ শাসকদলের হয়েই কাজ করে। আর সেই কারণে পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও জানিয়েছে তারা।
৮. শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনেও এই রাজ্যে ভোট সন্ত্রাস চরম আকার নিচ্ছে। আর সেই কারণে প্রথম থেকে সতর্ক থাকার জন্য বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণ তো রয়েছে। রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী হলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের অভিযোগ পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করে।
৯. যদিও রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত স্থির করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। রাজ্যের পুলিশ কর্মীর ঘাটতি মেটাতে অন্যান্য রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হবে। ১০ জুন থেকে রাজ্যের সমস্ত পুলিশ কর্মীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। একমাত্র জরুরি কারণেই ছুটির আর্জি বিবেচনা করা হতে পারে বলেও নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
১০. একটা সময় রাজ্য সরকার সিভিক পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ারদের ওপর অনেকটাই ভরসা করত। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার সিভিকদের গাইডলাইন বাঁধতে বাধ্য হয়েছে। সেক্ষেত্রে সিভিকদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলার কাজ করানো যাবে না বলেই জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। সিভিকরা শুধুমাত্র ভিড় সামলাতে ট্রাফিক সামলাতে পুলিশকে সাহায্য করবে।