
'মা আমি চুরি করিনি!' এই কথা লিখে নিজেকে শেষ করে দিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাস। না বলে দোকান থেকে হাতে তুলে নিয়েছিল একটা মাত্র চিপসের প্যাকেট। কিন্তু তারই জন্য ভরা বাজারে সদ্যো কৈশোরে পা দেওয়া একটি ছেলেকে 'চোর' অপবাদ দিয়ে চরম অপমান করা হয়। দোকানদার যে কিনা পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। সে সকলের সামনেই ছোট্ট ছেলেটিকে 'চোর' অপবাদ দেয় আর কান ধরে ওঠবোস করায়। এখানেই শেষ নয়! ছেলেটির মাও সকলের সামনেই কৃষ্ণেন্দুকে অপমান করে। সদ্যো কৈশোরে পা দেওয়া কৃষ্ণন্দু এই অপমান মেনে নিতে পারেনি। বাড়ি ফিরেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ।
ঘটনাস্থল পাঁশকুড়ার সোগইবেড় বাজার। রবিবার ছুটির দিন ছিল। বাড়িতে বসে বসে হঠাৎই চিপস খেতে ইচ্ছে হয়েছিল। তাই গিয়েছিল বাজারে। কৃষ্ণেন্দুর পরিবারের অভিযোগ যে দোকানে কৃষ্ণেন্দু গিয়েছিল সেদিন সেই দোকানে চিপস ছিলনা,এমনকি দোকানদারকে বার বার ডেকেও সাড়া পায়নি কৃষ্ণেন্দু,দোকানের বাইরেই চিপসের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে কৃষ্ণেন্দু সেই প্যাকেট কুড়িয়ে নেয়।
এই ঘটনা দেখেই দোকানের মালিক তথা পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিত মোটর বাইক নিয়ে ধাওয়া করে ওই নাবালককে। কৃষ্ণেন্দু কে পাকড়াও করে চুরির অপবাদ দেয়। সর্বসমক্ষে বাজার এলাকায় কান ধরে ওঠবস করায়।এবং মারধর করে। ছেলের ওপর হওয়া নির্যাতন সহ্য করতে পারেনি মা। তিনিও প্রকাশ্যেই কৃষ্ণেন্দুকে শাসন করে। চিপসের টাকা মিটিয়ে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু বাড়িতে এসেই চরম সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাস সেভেনের ছাত্র। একটি চিঠি লিখে কীটনাশক খেয়ে নেয়। তাকে তমলুক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে মৃত্যু হয়। কৃষ্ণেন্দুর মৃত্যুর পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। শুভঙ্করের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে স্থানীয়রা। ়
নিহতের পরিবারের দাবি, তাদের ছেলে চুরি করেনি। কারণ নিহত কৃষ্ণেন্দু কীটনাশক খাওয়ার আগে নিজের খাতায় লিখে গিয়েছিল, 'মা আমি চুরি করিনি। কুড়কুড়ের প্যাকেটটা সত্যি রাস্তায় পড়েছিল। সেখান থেকেই কুড়িয়ে নিয়েছিলাম।' পরিবারের সদস্যরা আরও জানিয়েছে, হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচান যায়নি কৃষ্ণেন্দুকে। অন্যদিকে গোটা ঘটনার সত্যি জানতে স্থনীয়রাই শুভঙ্করের ওপর চাপ দেয় সিসিটিভি দেখাতে। কিন্তু তাতে সে রাজি হয়নি। এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াও দেয়নি সিভিক ভলান্টিয়ার তথা দোকানের মালিক।