
কোচবিহার: বহুবার আবেদন করেও কাস্ট সার্টিফিকেট পাননি তিনি। যারফলে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অসম সরকারের NRC নোটিশ পাওয়া কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসী। রীতিমতো অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, 'চোদ্দ গুষ্টি'র কাগজ চাইছিলেন রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা।'
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ওই ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলতেই তাকে ডেকে পাঠানো হয়। পাশাপাশি, সাততড়িঘড়ি তাঁকে কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সরকারি আধিকারিকদের এই তৎপরতায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি এতদিন জেনে বুঝে হেনস্থা করা হচ্ছিল উত্তমবাবুকে। উল্লেখ্য, অসম প্রশাসনের তরফে উত্তম ব্রজবাসীকে পাঠানো নোটিশও বাতিল করা হয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়, কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তম ব্রজবাসীকে অসম সরকারের তরফে NRC নোটিশ পাঠানোকে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আঘাত বলে দাবি করেন। এর বিরোধিতায় দেশের সমস্ত বিরোধী দলকে সরব হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। এর পরই তৎপর হয় জেলা প্রশাসন। অভিযোগকারী উত্তম ব্রজবাসীকে তাড়াতাড়ি ডেকে পাঠানো হয় বিডিও অফিসে। সেখানে তাঁকে কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
এই বিষয়ে উত্তম ব্রজবাসী বলেন, "আমাকে হঠাৎ বিডিও অফিসে ডেকে এনেছে। আমাকে আজই সার্টিফিকেট দেবে বলেছে। আমি এর আগে বহু বার সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু পাইনি। এরা বলেছিল বাপ - ঠাকুরদা চোদ্দ গুষ্টির কাগজ নিয়ে এসো। সে সব কোথায় পাব?"
অন্যদিকে, অসম প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তম ব্রজবাসীকে পাঠানো নোটিশটি বাতিল করা হয়েছে। সূত্রের খবর, কোনও রাজবংশীকে NRC-র নোটিশ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে মঙ্গলবারই কোচবিহারে NRC বিরোধী মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল।
জানা গিয়েছে, কোচবিহারের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভপ্রকাশ করেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘’আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি জেনে যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, এনআরসি নোটিশ জারি করেছে। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে বিদেশি/অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনও ক্ষমতা বা অধিকার নেই। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানো, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং নিশানা করার একটি পূর্বপরিকল্পিত নোংরা চক্রান্ত চলছে। এই অসাংবিধানিক আগ্রাসন জনবিরোধী এবং এটি বিজেপির বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক সুরক্ষাকে ধ্বংস করে বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।''
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।