
মুর্শিদাবাদের ঘটনা কীভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের রূপ নিল, সেই প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ২০০-এরও বেশি মানুষ গ্রেফতার হন। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ থেকে মালদহে পালিয়ে যান প্রায় ৪০০ জনের মতো মানুষ। এদের বেশিরভাগই হিন্দু বলেও পুলিশ জানায়।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সামসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানে সাম্প্রদায়িক হিংসা যে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম নেতাদের সৃষ্টি ছিল তা ইতিপূর্বেই তদন্ত রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম(এস আই টি)। মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ-বিরোধী বিক্ষোভের তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির একটি প্রতিবেদনে প্রশাসনের গাফিলতির কথাই তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য একটি সংস্থার তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে সিটের তদন্ত রিপোর্টের বেশ কিছু পাতার ছবি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতাই মুর্শিদাবাদের হিংসা ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ। সেই সঙ্গে সিটের তদন্ত রিপোর্টে এমন গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মত। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে "মূল আক্রমণ" ১১ এপ্রিল ঘটেছিল এবং "স্থানীয় পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় এবং সেদিন অনুপস্থিত ছিল"।
এতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে ধুলিয়ান শহরে হামলার পরিকল্পনায় একজন স্থানীয় কাউন্সিলর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তদন্ত রিপোর্ট বলছে ১৭ এপ্রিল হাইকোর্ট সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুতদের সনাক্ত এবং পুনর্বাসনের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন, সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদ এলাকায় তাদের বাড়িতে একাধিক ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া বাবা-ছেলে - হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
যোগিন্দর সিং (রেজিস্ট্রার, আইন, এনএইচআরসি), সত্য অর্ণব ঘোষাল (সদস্য সচিব, ডব্লিউবিএলএসএ) এবং সৌগত চক্রবর্তী (রেজিস্ট্রার, ডব্লিউবিজেএস) -এর সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলটি গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ডিভিশন বেঞ্চে জমা দেওয়া একটি পুরোনো প্রতিবেদনে ৮ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে মুর্শিদাবাদে ব্যাপক গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছে, যা ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত।
রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে যে বেশ কয়েকজন মহিলাকে নাকি নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছিল। গ্রামে গ্রামে আগুন লাগাবার পর জলের সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, যাতে কোনওভাবেই আগুন নেভানো না যায়। সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদ এলাকায় তাদের বাড়িতে একাধিক ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া বাবা-ছেলে - হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে পিছন থেকে কুড়ুল দিয়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু পুলিশ কোনওভাবেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।