নদিয়ার শান্তিপুর থানার ফুলিয়ার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উমাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ দাস। সংসার চালানোর জন্য ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের পুনেতে। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর দেহ।
আবারও ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হল বাংলার কর্মীকে। এবারের ঘটনাস্থল মহারাষ্ট্রের পুনে। তবে, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় নয়, প্রাণ গেল বন্ধুর হাতে খুন হয়ে।
নদিয়ার শান্তিপুর থানার ফুলিয়ার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উমাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ দাস। সংসার চালানোর জন্য ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের পুনেতে। তাঁরা দুই ভাই। বিকাশ ছিলেন বড়। বিকাশের বাবা-মার মৃত্যু হয়েছে আগেই। তাঁর পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে, তাঁরা সকলে নদিয়াতেই বাস করেন এবং সংসারে একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী ছিলেন বিকাশ নিজে। তিনি পেশায় কাঠের মিস্ত্রি। একইরকম কাজে বিকাশের ছোট ভাইও বর্তমানে কেরলে রয়েছেন। কাজ করে রোজগারের টাকা বিকাশ তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়িতে পাঠাতেন। আর তাতেই চলত সংসার।
পুনেতে বিকাশ ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেই ঘরেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। কিন্তু, ঠিক কী কারণে খুন হতে হল তাঁকে?
জানা গিয়েছে, ওই একটি ঘরে অনেক কর্মী ভাড়া থাকার সুবাদে এক একদিন রান্না করার ভার পড়ত এক একজনের ওপর। ঘটনার দিন রাত্রে রান্না করার ভার পড়েছিল সুব্রত সন্ন্যাসী নামের এক ভাড়াটের ওপর। সুব্রত রান্না করেছিল মাছের ঝোল আর ভাত। রাতে নিজের ডিউটি সেরে ঘরে ফিরে এসে বিকাশ দাস খেতে বসেছিলেন। কিন্তু, খেতে খেতে তিনি বুঝতে পারেন যে, মাছগুলো ঠিকমতো ভাজাই হয়নি এবং তার ফলে তরকারিও যথেষ্ট বেস্বাদ। বন্ধু সুব্রতকে সেকথা বলেও ছিলেন তিনি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত সেই ছোট্ট কথা নিয়েই দুই বন্ধুর মধ্যে বেঁধে যায় বচসা। বিকাশ খাবার না খেয়ে থালা ঠেলে দিয়ে উঠে যান এবং বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘরের বাকি ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, এর পর পিছন থেকে এসে একটি লোহার রড হাতে নিয়ে সুব্রত ঘুমন্ত বিকাশ দাসের একেবারে মাথায় গিয়ে আঘাত করেন। একই ঘরে থাকা আরও বাকি ২ জন তাঁকে আটকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পরেও ২ বার বিকাশকে রড দিয়ে আঘাত করেন সুব্রত। অল্প কিছু সময় পরেই মৃত্যু হয় বিকাশ দাসের।
গতকাল সেই দুঃখের খবর নদিয়ার উমাপুর গ্রামে এসে পৌঁছোয় বিকাশের বাড়িতে। খবর শুনেই প্রায় আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবারের লোকজনের মাথায়। অভিযুক্ত সুব্রতর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের লোকজন। যদিও নিজের বাবার মৃত্যুর খবর এখনও পর্যন্ত জানে না বিকাশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহত বিকাশ দাসের শ্যালিকা মৌসুমী মিত্রও। বাড়ির একমাত্র রোজগেরের খুনের খবর পেয়ে কীভাবে নিজের দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবেন, তা ভেবেই পাচ্ছেন না মৃত কর্মীর স্ত্রী।
আরও পড়ুন-
মুসলিম যুবককে পিটিয়ে খুন, কর্ণাটক জুড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আঁচ-জারি ১৪৪ ধারা
উদয়পুরের হত্যাকারীদের সঙ্গে বিজেপি নেতার ছবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরালো আক্রমণ অভিষেকের
ছাঁটাই করায় রাগ, দোকান মালিককে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, মৃত্যু ২ জনেরই