ওঝার কেরামতিতে কুসংস্কারের বলি হতে হল সাপে কামড়ানো এক গৃহবধূকে। প্রকাশ্যে সকলের সামনে ছটপট করতে করতে প্রাণ গেল অসহায় মহিলার
সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে (Superstition) হাতিয়ার করে ওঝার কেরামতিতে কুসংস্কারের বলি (Died without treatment) হতে হল সাপে কামড়ানো এক গৃহবধূকে (Women)। প্রকাশ্যে সকলের সামনে ছটপট করতে করতে প্রাণ গেল সাপে কামড়ানো ঐ অসহায় মহিলার। বর্তমান দিনে এমন কুসংস্কারের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় রবিবার মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী আলুয়ানি এলাকায়। ওই মহিলার নাম আজবালা সরকার(৫৪)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন কন্যা সন্তানের জননী মধ্যবয়স্কা আজবালা কোন রকমে তার নিজের ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকতেন। চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর জমে থাকা জলের কারণে কয়েকদিন ধরেই নানান ধরনের কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে বিষধর সাপের উৎপাত শুরু হয়েছে এলাকায় বলেই অভিযোগ।
সম্প্রতি ওই মহিলার ছোট মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে মায়ের কাছে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সকলে মিলে মাটির ঘরে মেঝেতে বিছানা করে ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকাই বাম হাতে কিছু কামড়ানোর ব্যথা পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। প্রথমে মশা বলে কিছু মনে না করলেও,দ্বিতীয়বার আঙুলে কামড়ালে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করেন ওই মহিলা আজবালা। এরপরেই চিৎকার করে ওঠেন তিনি।
চিৎকার শুনে তার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ছুটে আসে তার জামাই। এরপরে যা ঘটল তার যুক্তিতে ব্যাখ্যা মিলছে না। আশ্চর্যজনক ভাবে পরিবারের লোকেরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। উল্টে কয়েক কিলোমিটার দূরে নজিপুরে এক ওঝার কাছে নিয়ে যায় তাঁকে। এমনকি সঙ্গে করে ওই বিষধর সাপটিকেও ধরে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে বোঝার কেরামতি। শেষ পর্যন্ত সে ওঝা বিধান দেয়, ঐ সাপ নাকি বিষধর নয় এবং মহিলার কোন ক্ষতি সে করতে পারেনি। তাই তাকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলে।
সেইমতো ওঝার বিধান শুনে আজবালাকে নিয়ে তার মেয়ে জামাই বাড়ি ফিরে চলে আসে। শুধু তাই নয়, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার আশ্বাসও দেয় ওই ওঝা। বাড়ি ফেরার পর কয়েক মুহুর্ত কাটতে না কাটতেই ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই গৃহবধূর মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে শুরু করে। এরপরই কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
এইদিকে মায়ের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তার মেয়ে। তিনি এদিন বলেন, "এইবার আমাদের আফসোস হচ্ছে সত্যি কি ভুল আমরা করেছি, অন্তত যদি একবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে এইভাবে ওঝার পাল্লায় পড়ে মায়ের অকালে মৃত্যু ঘটত না"।