দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। পড়াশোনা করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন দিন বদলের আশায়। কিন্তু এক রাতেই যে রাতারাতি জীবনটাই বদলে যাবে তা ভাবতেও পারেননি মালদহের হবিবপুরের বাসিন্দা অসীম সমাদ্দার। আর সেই বদল এমনই হল যে কোটিপতি হয়েও প্রাণভয়ে কার্যত নাওয়া খাওয়াও ভুলেছিলেন ওই ভাগ্যবান। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে খুঁজে বের করে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় ধরে যেন প্রাণ ফিরেছে বছর তিরিশের যুবকের।
মালদহের হবিবপুরে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম দল্লা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের মতো অসীমের পরিবারেরও জীবিকা বলতে সামান্য জমিতে চাষবাষ করা। অসীম অবশ্য ২০১৬ সালে বিএ পাশ করেছেন। তার পর থেকে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি বাবা- মায়ের সঙ্গে চাষের কাজও করেন তিনি।
এ ভাবেই দিন কাটছিল অসীমের। গত ২১ ডিসেম্বর কিছুটা শখেই লটারির একটি টিকিট কেটেছিলেন অসীম। আর তাতেই বাজিমাত। লটারির প্রথম পুরস্কার বাবদ এক কোটি টাকা জেতেন ওই যুবক। তাঁর কেনা টিকিটের নম্বরেই বাধে পুরস্কার। খবর জানতে পারার পর থেকেই যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন অসীম। এ ভাবে হঠাৎ তিনি কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কিন্তু বার বার টিকিটের নম্বর মিলিয়ে দেখার পর নিশ্চিত হন তিনি। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরই অবশ্য গ্রাস করে অন্য আতঙ্ক। কোটি টাকার লটারির টিকিট হাতিয়ে নেওয়ার লোভে কেউ তাঁর ক্ষতি করবে না তো? ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অসীমের বাবা- মাও। ভয়ে কাউকে কিছুই জানাননি তাঁরাও। আতঙ্কে দু' দিন ধরে কার্যত নাওয়া- খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় অসীম এবং তাঁর বাবা- মায়ের।
মালদহের কেউ কোটি টাকা জিতেছেন, দু' দিন আগেই সেই খবর চাউর হয়ে গিয়েছিল। হন্যে হয়ে সেই ভাগ্যবানকে খুঁজছিল পুলিশও। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে হবিবপুর থানায় গিয়ে লটারি জেতার কথা জানায় সমাদ্দার পরিবার।
অসীমের বাবা অধীর সমাদ্দার জানান, 'ছেলের লটারি পাওয়ার পর প্রথমে দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছিল। খাওয়া- দাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্ক ছিল কেউ ছেলের ক্ষতি করবে না তো? শেষ পর্যন্ত পুলিশ অভয় দেওয়ায় মনে বল পেয়েছি।'
এখন অবশ্য ছেলের ভাগ্যবদলে যাওয়াটা উপভোগ করছেন অসীমের বাবা- মা অধীর এবং অঞ্জলি সমাদ্দার। ছেলেকে আর তাঁদের মতো চাষবাষ করে জীবন কাটাতে হবে না, এটা ভেবেই তাঁরা খুশি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীরাও অসীমদের বাড়িতে তাঁকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। অঞ্জলীদেবী বলেন, 'সবাই বলছে আমি কোটিপতির মা।'
এতকিছুর মধ্যেও ভাগ্য বদলে দেওয়া লটারির টিকিটটি আগলে রেখেছেন অসীম। তাঁর দাবি, আগে কোনওদিনই লটারির টিকিট কাটেননি। এখনও ঘোরের মধ্যে থাকা অসীমের কথায়, 'দু- দশ টাকার তো বিষয় না, একবারে কোটি টাকা। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি না তো। দু' তিন বার টিকিটের নম্বর মিলিয়ে দেখার পর বুঝলাম যে সত্যিই আমিই কোটি টাকা জিতেছি।'
কিন্তু কোটি টাকা দিয়ে কী করবেন? সেই দায়িত্বটা আপাতত নিজের বাবার উপরেই দিতে চান অসীম। তবে বাবা-মাকে আর কষ্ট করতে দেবেন না, সেটা স্থির করে ফেলেছেন। মাটি, বেড়ার বাড়ির বদলে পাকা বাড়িও তৈরি করবেন। প্রতিবেশীরা অবশ্য বিয়েটাও সেরে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তা শুনে লাজুক হাসছেন অসীম!