সংক্ষিপ্ত
মহাশিবরাত্রির দিনে কতগুলি বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল। পুরাণ অনুযায়ী এই দিন শিব মাথায় ধারণ করেছিলেন চন্দ্রকে।
মহাশিবরাত্রি দিনটি শুধুমাত্র যে শিব চতুদর্শী তা নয়। এই দিনে আরও বেশ কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। পুরাণ অনুযায়ী এই বিশেষ দিনটিতেই চন্দ্রকে মাথায় ধারণ করেছিলেন মহাদেশ। এই বিশেষ দিনেই মার্কণ্ডেয় ঋষি মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র স্বীকৃতি পেয়েছিল। পূণ্যভূমি হিসেবে পুরাণে স্থান পেয়েছিল সোমনাথের তট।
প্রজাপতি দক্ষের অভিশাপ
প্রজাপতি দক্ষ অভিশাপ দিয়েছিল চন্দ্রদেবকে। কারণ দক্ষেই প্রায় ২৭ জন কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন চন্দ্র। কিন্তু তাঁদের মধ্যে রোহিনী ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা। তাই দক্ষের বাকি কন্যারা পিতাকে অভিযোগ জানায়। তাতেই ক্রুদ্ধ দক্ষ অভিশাপ দিয়েছিলেন। চন্দ্রের বিনাশের অভিশাপ। তাতে ক্ষয় ধরেছিল চন্দ্রদেবের। চন্দ্র যদি বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে ধ্বংসার মুখে পড়বে সৃষ্টি। এই অবস্থায় সমস্ত দেবতা স্মরণাপন্ন হন মহাদেবেরষ কিন্তু মহাদেবেরই কিছু করার ছিল না। কারণ তার আগেই প্রজাপতি দক্ষ সমস্ত পুজো থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন শিবকে। এই অবস্থায় আসরে নামেন ব্রহ্মা আর বিষ্ণ। তাঁরা ছল করে শিবলিঙ্গ হাতে নিয়ে সতীকে পুজো করেন, তাতেই দোষ কাটে মহাদেবের। তখনও কিন্তু শিব আর সতী বা আদিশক্তির মিলন হয়নি। যাইহোক, শিব দোষমুক্ত হন। এই অবস্থায় সতীকে নিয়েই নারদ মার্কেণ্ডেয় ঋষির দ্বারস্থ হন। সেখানেই তিনি দক্ষরাজার কন্যা সতীকে মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র দেন।
সোমনাথের তট
সোমনাথে তটে শায়িত ছিল চন্দ্রের নিথর দেহ। তাতে ধীরে ধীরে ক্ষয় রোগ ধরছিল। সেই সময়ই সতীর উদ্যোগে মার্কণ্ডেয় ঋষির মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র আনা হয়। সেই সময় সমস্ত শিবভক্তরা জড়ো হয়েছিলেন সোমনাথের তটে। সেখানেই মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের বলে মহাদেবের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বার প্রাণ ফিরে পান চন্দ্রদেব। কিন্তু শিব তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন, প্রজাপতি দক্ষের অভিশাপের পর টানা বেঁচে থাকার অধিকার চন্দ্রের থাকবে না। কারণ চন্দ্র পতি ধর্ম পালন করেননি। তারপরই তিনি বলেন তিনি চন্দ্রকে মাথায় ধারণ করবেন। আর একপক্ষ আর্থাৎ ১৫ দিন ধরে তিন ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন। বাকি ১৫ জিন ধরে বৃদ্ধি পাবেন। প্রাণ ফিরে পেয়ে চন্দ্র জানিয়েছিলেন তিনি সোমনাথের তটকে একটি পূর্ণভূমিতে পরিণত করতে চান। তাতেই সায় দেয় ব্রহ্মা ও বিষ্ণ। সায় ছিল মহাদেবেরও। অনেকেই মনে করেন সোমনাথ মন্দিরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রদেব। কারণ এখনও পর্যন্ত সোমনাথের মন্দিরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠানার তেমন কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
শিবের আশীর্বাদ
শিব চতুর্দশীর দিন শিবের অভিষেক করলে শিব তুষ্ট হবেন। এমনটাও জানিয়েছিলেন মহাদেব। তিনি আরও বলেছিলেন এই দিন যে অবিবাহিত মহিলারা শিব পুজো করবেন তাঁরা নিজের মনের মত স্বামী পাবেন। পুরুষদের জন্য তাঁর আশীর্বাদ ছিল কর্মে বিঘ্ননাষ। তিনি বলেছিলেন মহিলাদের কাজের বাধা আর সংসারের অশান্তি কাটবে এই দিন বিশেষ পুজো করলে।
তাই একটা নয় মহাশিবরাত্রিতে একাধিক শুভ ঘটনা ঘটেছিল। যদিও শিব-সতীর মিলন তখনও হয়নি। কিন্তু এই বিশেষ দিনটির আগে থেকেই শিবকে স্বামী রূপে পেতে চেয়েছিলেন সতী। যদিও বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন প্রজাপতি দক্ষ। পুরাণ অনুযায়ী পরবর্তীকালেও শিব আর সতীর মিলনে তিনি ছিলেন অন্যতম বাধা। কিন্তু পুরাণ অনুযায়ী মহাশিবরাত্রীর দিনে শিব আর সতীর দেখা হয়েছিল।