সংক্ষিপ্ত
কার্তিকী অমাবস্যায় অলক্ষ্মী বিদায়, জেনে নিন এই বিশেষ দিনের মাহাত্ম্য।
কার্তিক মাসে যে অমবস্যা পড়ে তাঁকে কার্তিকি অমাবস্যা বলে। এই বিশেষ তিথিতেই হয়ে থাকে কালী পুজো। এছাড়াও পরিবারে সুখ সমৃদ্ধির জন্য দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজোও করা হয়। অলক্ষ্মী বিদায়ের জন্যই এই বিশেষ পুজোর আয়োজন। ২০২১ সালে কার্তিকী অমাবস্যা পড়ছে, ৫ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষে অমাবস্যা তিথিতে পুজিত হবেন মা। ৫ নভেম্বর সকাল ৬.০৩ মিনিট থেকে ৫ নভেম্বর মধ্যরাত ২.৪৪ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে এদিন লক্ষ্মী দেবীর পুজো হয় সন্ধ্যার মুখে। এদিন লক্ষ্মী পুজোর সময় সন্ধ্যা ৬.০৯ থেকে ৮.২০ মিনিট পর্যন্ত। ১ ঘন্টা ৫৫ মিনিট থাকছে পুজোর মুহূর্ত।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি যা কিনা দীপান্বিতা অমাবস্যা (Dipanwita Amavasya) বলে পরিচিত সেদিন মা কালী ছাড়াও মা লক্ষ্মীর (Maa Laxmi) আরাধনা করা হয়। কালীপুজোর রাতে প্রতিবার অশুভ নাশ করে শুভ শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে সবাই। পুরাণ মতে, অলক্ষ্মী হল দেবী লক্ষ্মীর দিদি। এঁদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন, প্রজাপতি ব্রহ্মার মুখের আলো থেকে জন্ম নেন লক্ষ্মী; আর পিঠ থেকে অলক্ষ্মী। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনিটি হল সমুদ্রমন্থনের। তার মধ্যে থেকেই অমৃতের পাত্র নিয়ে জন্ম হয় দেবী লক্ষ্মীর। আর তার ঠিক আগেই জন্ম নেন অলক্ষ্মী। সব দিক থেকেই যেন বোন লক্ষ্মীর বিপরীত তিনি। তাঁর মতো শান্ত স্বভাবের নন, সৌভাগ্যের প্রতীকও নন। বরং পুরাণ ও শাস্ত্রে দেবী অলক্ষ্মীকে বর্ণনা করা হয়েছে কুরূপা, ঈর্ষা ও দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। গাধার পিঠে চেপে তিনি হাজির হন ঘরে ঘরে।
আরও পড়ুন- জেনে নিন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় কোন উপায়ে দেবী হবেন সন্তুষ্ট? সংসারে আসবে সমৃদ্ধি?
আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কী? জানুন বাড়িতে পুরোহিত ছাড়াই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পদ্ধতি
এই অমাবস্যা তিথিতে অলক্ষ্মী পুজো হয়, কারণ অমঙ্গল ও অশুভের প্রতীক হলেও, অলক্ষ্মীকে ভগবতীর এক রূপ বলে মনে করা হয়। আমাদের সবার মধ্যেই সাদা এবং কালো— দুটি দিকই আছে। কখনও কখনও হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষে ভরে উঠি আমরা। সেইজন্যই কালীপুজোর দিন লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী দুজনেরই পুজো করা হয়। ঠিক যেমন দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার (Devi Durga) সঙ্গে আসেন মহিষাসুরও। মনে করা হয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর (Kojagori Laxmi Puja) সময় দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে হাজির হন অলক্ষ্মীও। তাই তাঁকে পুজো করেই বিদায় করা হয়। আর এমন কাজ করার জন্য কালীপুজোই হল আসল দিন। যখন অশুভের নাশ করতে শুভ শক্তির উদয় হয়।
লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) মতোই আলপনা দেওয়া হয় এইদিন। কালীপুজো বলে চারিদিকে থাকে আলোর রোশনাই। তার মধ্যেই শুরু হয় অলক্ষ্মী পুজো। গোবর দিয়ে তৈরি করা হয় অলক্ষ্মীর মূর্তি; আর পিটুলি দিয়ে লক্ষ্মী-নারায়ণ এবং কুবেরের মূর্তি। পুজো হয়ে গেলে মেয়েরা অলক্ষ্মীর সেই মূর্তিটিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। সঙ্গে শোনা যায় সমবেত ধ্বনি, ‘লক্ষ্মী আয়, অলক্ষ্মী যা’। এইভাবেই ঘরের সব অশুভকে অলক্ষ্মীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে রেখে আসেন তাঁরা। ভেতরে থেকে যান কেবল লক্ষ্মী। সাদা আর কালো নিয়ে বসবাস করলেও, কালো যেন আমাদের গ্রাস না করে, সেই প্রার্থনাই চলতে থাকে এই পুজো জুড়ে।