সংক্ষিপ্ত
- বলিউডে গত এক দশকে একের পর এক হিট নাম্বারস
- সলমন খানের হাত ধরে বলিউড প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং-এ আবির্ভাব
- সুর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গানও গাইতেন ওয়াজিদ
- কিন্তু, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত ওয়াজিদ পারলেন শেষরক্ষা করতে
ফের বলিউডে নক্ষত্র পতন। চলে গেলেন বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক ওয়াজিদ খান। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। রবিবার গভীররাতে মুম্বইয়ে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর। বলিউডের বিখ্যাত সুরকার জুটি সাজিদ-ওয়াজিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। দুই দশক ধরে এই জুটি একের পর এক হিট গানে সুর করেছিলেন। এমনকি, গায়ক হিসাবে ওয়াজিদ এক অন্য ধরনের কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। যার সুফিয়ানা মেজাজ বলিউড রোমান্টিক এবং স্যাড সঙে এক অসামান্য কন্ঠ-কে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরেই কিডনি-র সমস্যায় ভুগছিলেন ওয়াজিদ। কিছুদিন আগে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনও করা হয়। এরপর ডায়ালেসিস চলছিল। এমন সময়ই লালারসের পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। এরপর থেকেই ওয়াজিদের শারীরিক অবস্থার প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছিল। রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটে। মুম্বইয়ের চেম্বুরের সুরানা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হলেও ওয়াজিদকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
আর এক বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক সেলিম মার্চেন্ট জানিয়েছেন, বেশকিছুদিন ধরেই কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ওয়াজিদ। চেম্বুরের সুরানা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। সেখানেই অবস্থার অবনতি হয় এবং প্রয়াত হন প্রতিভাবান এই শিল্পী।
সলমন খান-এর হাত ধরেই বলিউড প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং-এ আসা ওয়াজিদের অধিকাংশ হিট গানেই লিপ দিয়েছেন ভাইজান। কিছুদিন আগে সলমন খান-এর লিপে ভাই-ভাই বলে একটি গান রিলিজ পেয়েছে। তারও সুর দিয়েছিলেন ওয়াজিদ।
সুরকার সেলিম মার্চেন্ট আরও জানিয়েছেন যে, ওয়াজিদের একাধিক শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে কিডনি-র অসুখ তাঁকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছিল। কিডনি প্রতিস্থাপনের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই তিনি কিডনি-র সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চারদিন আগে থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল ওয়াজিদকে। কিডনির সংক্রমণকে আর সামলাতে পারেননি ওয়াজিদ। আর এটাই প্রাণঘাতি হয়ে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম মার্চেন্ট।
১৯৯৮ সালে সলমন খান ও কাজল অভিনীত প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যা ছবিতে সুর দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন সাজিদ-ওয়াজিদ। এরপর সলমন খান অবিনীত গর্ব, তেরে নাম, তুম কো না ভুল পায়েঙ্গে, পার্টনার এবং দাবাং-সিরিজে-র প্রতিটি-তে সাজিদ-ওয়াজিদ সুর দিয়েছিলেন। এমনকি, ওয়াজিদ এরমধ্যে সমস্ত ছবিতেও প্লে-ব্যাক করেছিলেন। যার বহু গান সুপার হিট এবং হিট-এর তকমা পেয়েছিল।
সলমন খানের লিপ দেওয়া ওয়াজিদের কয়েকটি বিখ্যাত গান হল- মেরা হ্যায় জলওয়া, ফেভিকল সে। এমনকি, রাউডি রাঠোর সিনেমাতে অক্ষয় কুমারের লিপে হিট হওয়া চিনতা তা চিতা চিতা গানেও প্লে-ব্যাক ছিল ওয়াজিদের। লকডাউন চলাকালীন সলমন খানের পানভেল ফার্ম হাউসে দুটি গান তৈরি হয়- একটি ছিল প্যায়ার করো না এবং অন্যটি ভাই-ভাই। এই দুই গানেই ছিলেন সলমন। এতেও সহকারী সুরকার হিসাবে ওয়াজিদ কাজ করেন। সম্প্রতি এই গান দুটি ওয়াজিদের ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ করা হয়েছে।
বলিউডে সুর দেওয়ার পাশাপাশি টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো-এ মেন্টর হিসাবে অংশ নিতেন ওয়াজিদ। সারে গা মা পা ২০১২ এবং সারে গা মা পা সিঙ্গিং সুপারস্টার রিয়্যালিটি শো-তেও মেন্টর ছিলেন তিনি। সাজিদ-ওয়াজিদের আরও এক পালক হচ্ছে আইপিএল ৪-এর থিম সঙ বানানো। ধুম ধুম ধাড়াকা বলে এই থিম সঙে প্লে-ব্যাক করেন খোদ ওয়াজিদ।
ওয়াজিদের প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বলিউডে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং- জগত এই প্রতিভাবান শিল্পীর প্রয়াণে টুইট করতে থাকেন। আরও বিখ্যাত সুরকার বিশাল দাদলানি টুইট জানান- তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ওয়াজিদ নেই। এটা তাঁর কাছে বিশাল দুঃখের খবর বলেও ব্যাখ্যা করেন বিশাল।
সাজিদ-ওয়াজিদের হাত ধরেই বলিউডে আজ একটা নাম হয়ে উঠেছেন পলক মুছল। তিনিও ওয়াজিদের প্রয়াণে শোক ব্যক্ত করে টুইট করেন। শোক প্রকাশ করেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে শুরু করে পরিণিতি চোপড়ারাও।