সংক্ষিপ্ত
- একেই বলে সমাপতন না হলে এমনটা হয়
- কারণ রিয়ার পাশের সেলেই ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়
- একজন বাঙালি কন্যা অন্য জন বাঙালি ঘরের গৃহবধূ
- রিয়া এবং ইন্দ্রাণীর মধ্যে ঘটনাক্রমে অনেক মিলও রয়েছে
রিয়া চক্রবর্তীর জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর বাইকুল্লা জেলে রিয়ার সেলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সারাক্ষণ তাঁর সেলের সামনে পাহাড়া দিচ্ছেন দুই জন করে মহিলা কনস্টেবল। ২৪ ঘণ্টার রোটেশনে তিনটি শিফটে তাঁদের ডিউটি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জামিন খারিজ হওয়ার খবর বাইকুল্লা জেলের কাছে আসতেই রিয়াকে একটি সিঙ্গল সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই সেলের একদম পাশেই রয়েছেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। যিনি গত কয়েক বছর ধরে নিজের মেয়ে শিনা বোরাকে খুনের চক্র্রান্ত এবং খুন ও আর্থিক তচ্ছরূপে জেলে বন্দি রয়েছেন। ইন্দ্রাণী বাঙালি ঘরের গৃহবধূ। এছাড়াও গুয়াহাটির মেয়ে। বাংলা ভাষার সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। এমনকী ভালো বাংলাও বলতে পারেন। সুতরাং, ইন্দ্রাণী-র সঙ্গে রিয়ার বাংলায় কোনও কথোপকথন হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। কারণ, বিপদের সময়ে বহু মানুষ যতই একাধিক ভাষায় দখল থাকুক, নিজের মাতৃভাষাকেই আকড়ে ধরে। আর তারপরে পাশের সেলের সঙ্গীও যখন বাঙালি ভাবনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ রাখেন তখন তো এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জানা গিয়েছে রিয়া চক্রবর্তীর কে যে সেলে রাখা হয়েছে তাতে কোনও ফ্যান বা মোটা বিছানা নেই। শুধুমাত্র একটি শতর়ঞ্চি দেওয়া হয়েছে বিছিয়ে শোয়ার জন্য। জেলের কোনও সেলেই সাধারণত সিলিং ফ্যান থাকে না। নিয়ম অনুযায়ী রিয়ার সেলেও তা নেই। যার ফলে গরমে পুরো ঘেমে-নেয়ে-ই রাত্রি যাপন করতে হয়েছে রিয়া-কে। সেই সঙ্গে রিয়াকে দেওয়া হয়েছে জেলের পোশাক। দেখা গিয়েছিল, জেলে যাওয়ার সময় রিয়া সাদা রঙের একটি ট্র্যাক প্যান্ট এবং নীল রঙের টি-সার্ট ও শ্রাগ পরেছিলেন। বাইকুল্লা জেলে ঢোকার সময় সে সব পোশাক ছেড়ে জেলের আল্লাখাল্লা মার্কা পোশাক পরে নিতে হয়েছে রিয়া-কে।
বাইকুল্লা জেল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছে, গরম লাগলেও কিছু করার নেই। রিয়াকে ফ্যান ছাড়াই সেলে থাকতে হবে। ফ্যানের দরকার লাগলে টেবিল ফ্যান দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে রিয়াকে। এর মানে এসি-র হাওয়া বাড়িতে দিন কাটানো কনে-কে এখন আধা অন্ধকার সেলে এক নিরাড়ম্বর জীবন কাটাতে হচ্ছে। ২১ তারিখ পর্যন্ত জেলে থাকার মেয়াদ রয়েছে রিয়ার। এরপর তাঁকে ফের আদালতে তোলা হবে। সেদিন জামিন না পেলে ফের জেলেই ফিরতে হতে পারে তাঁকে।
বাইকুল্লা জেলে রিয়ার জীবনের পক্ষেও ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ, জেলের অসংখ্য কয়েদি সুশান্ত সিং রাজপুত-এর মৃত্যুর খবর জানে। এমনকী, এদের মধ্যে অনেকে আবার নিজেকে সুশান্তের ভক্ত বলেও দাবি করে থাকে। সুতরাং, এমন কোনও কয়েদি-র হাতে রিয়া-র হেনস্থা বা জীবনহানির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, বাইকুল্লা জেলে বন্দি থাকা অধিকাংশ বন্দি-রই দাগী অপরাধের ইতিহাস রয়েছে। যার জন্য রিয়ার সেলে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।
রিয়া-কে শোয়ার জন্য কোনও মোটা বিছানা বা গদিওয়ালা ম্যাট দেওয়া হয়নি। তাঁকে শুধুমাত্র একটি শতরঞ্চি দেওয়া হয়েছে। এমন শতরঞ্চি এই জেলে আসা সমস্ত কয়েদি-দের দেওয়া হয়। বলিউডের নায়িকা বলে রিয়া-র প্রতি আলাদা কোনও বিশেষ সহমর্মিতা দেখানো হচ্ছে না। যদি, মোটা বিছানা লাগে, তাহলে রিয়াকে তা আদালতের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে নিতে হবে।
বাইকুল্লা জেলে গত কয়েক মাসে একাধিক কয়েদি কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। এর জন্য কয়েদিদের দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রিয়াকেও হলুদ-মিশ্রিত দুধ দেওয়া হয়েছে।
তবে, বাইকুল্লা জেলে এখন সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় রিয়া ও ইন্দ্রাণীর পাশাপাশি সেল। একজন বাঙালি কন্যে, অন্যজন বাঙালি ঘরের বধূ। একজন নিজের প্রেমিক তথা বলিউডের প্রতিভাবান নায়কের মৃত্যুর তদন্তে মাদক কেসে জেলে বন্দি। অন্যজন নিজের মেয়েকে খুনের অভিযোগে জেলে। একে অদ্ভুত সমাপতন বলেই মনে করছে বাইকুল্লা জেল কর্তৃপক্ষ।