সংক্ষিপ্ত

পুকুরে ইলিশ চাষের এই প্রকল্প শতভাগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ইলিশ চাষ করা সম্ভব হবে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইলিশ আরও বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।

ইলিশের (Hilsa) কথা শুনলেই জল চলে আসে মুখে। আর রসনাপ্রিয় বাঙালির কাছে ইলিশ যেন অমৃত। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল এই মাছ কখনও সারা বছর পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র বর্ষার (Monsoon Season) সময়তেই এই মাছ পাওয়া যায়। তবে যদি এই মাছ সারাবছর পাওয়া যায় তাহলে মন্দ হয় না! এই মাছের চাষকে (Fish Farming) বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে বেছে এখন পুকুরেও শুরু হয়েছে ইলিশের চাষ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের অর্থায়নে উপকূলীয় মৎস্য প্রকল্পের আওতায় বংশবিস্তারে পুকুরে ইলিশের চাষ করছে পটুয়াখালী মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র। 

পুকুরে ইলিশ চাষের (Hilsa Farming in Pond) এই প্রকল্প শতভাগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ইলিশ চাষ করা সম্ভব হবে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইলিশ আরও বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া আন্ধারমানিক নদী থেকে ইলিশের পোনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা নির্দিষ্ট পুকুরে এনে চাষ করা হয়। 

আরও পড়ুন- পোলট্রি ফার্মিং থেকে আয়ের পথ প্রসস্থ করুন, জেনে নিন এই ব্যবসায় হাতেখড়ির খুঁটিনাটি

ইলিশের পোনা সংগ্রহ

ইলিশের পোনা সংগ্রহ করার জন্য কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদী থেকে গভীর বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন পটুয়াখালী মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহম্মদ আশরাফুল হক ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল তিন থেকে চার মাস বয়সী ইলিশের পোনা সংগ্রহ করা। সকাল ১০টার দিকে গভীর বঙ্গোসাগরে ইলিশের জোন হিসেবে পরিচিত মাঝেরচর ও খ্যাপেরচর এলাকায় জোয়ার শুরু হতেই বিশেষ জাল দিয়ে ইলিশের ছোট পোনা সংগ্রহ করেন গবেষণা কেন্দ্রের কর্মীরা। সাগর থেকে ছোট ইলিশ পোনা তুলে তা লোনা পানি ভরা বিশেষ পলিথিনে রাখা হয়। পোনাগুলোকে জীবিত রাখতে ওইসব পলিথিনের ভিতরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এ কাজ পুকুরে ইলিশ চাষের প্রথম ধাপ। পোনা সংগ্রহ শেষে স্পিডবোটে বিকেল ৩টায় উপকূলে গবেষণা কেন্দ্রে ফেরে গোটা দল। পরে পলিথিনের ব্যাগ থেকে গবেষণাগারের ৯টি পুকুরে ছাড়া হয় ইলিশের পোনাগুলিকে। 

আরও পড়ুন-Business Idea-মোটা আয়ের পথ খুঁজছেন? তাহলে শুরু করুন কড়কনাথ মুরগীর ব্যবসা,৫৩ হাজারের বিনিময়ে পাবেন ৩৫ লাখ

কীভাবে পুকুরে চাষ হবে

মহম্মদ আশরাফুল হক জানিয়েছেন, এই সব পুকুরে প্যাটেল হুইল অ্যারোটল দিয়ে কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি করে পোনার স্বাভাবিক চলাচলের গতি ঠিক রাখা হয়। পাশাপাশি এয়ার ব্লোয়ার দিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। ৯টি পুকুরে ৩টি ট্রিটমেন্ট এবং ৯টি রেফ্রিগেশনের মাধ্যমে পোনাগুলোকে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়।

এদিকে, পুকুরে ইলিশ চাষের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে খুশি উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। তাঁরা জানান, এভাবে সাগরের ইলিশ পুকুরে চাষ করা গেলে মাছ শিকারে আর গভীর সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে না। সবথেকে বড় বিষয় হল, ইলিশের চাষ করতে আর কোনও সমস্যা হবে না। পাশাপাশি এই চাষ সফল হলে নিজের পুকুরেই ইলিশের চাষ করতে পারবেন চাষিরা। তার ফলে বিকল্প আয়ের রাস্তাও তৈরি হবে।   

আরও পড়ুন- বাহারি ফুলের চাষে উপার্জনের বিকল্প পথ খোঁজায় নজির গড়েছে খিড়াই

মহম্মদ আশরাফুল হক বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির এ কৌশল বের করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তিত অবস্থায় খাপ খাওয়ানো, পুকুরে অভ্যস্ত করা, বংশবৃদ্ধি, বাঁচার হার, সহ্য ক্ষমতা ও খাদ্যাভাস নিয়ে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তারপরই পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু করা হয়েছে।"