সংক্ষিপ্ত

আমাদের দেশে পোলট্রি পালন আজকাল খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পেশার হাত ধরে উপার্জনের পথও প্রসস্থ হয়েছে। পোলট্রি ফার্মিং গ্রামীণ যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান যোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

আমাদের দেশে পোলট্রি পালন (Poultry Firming) আজকাল খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পেশার হাত ধরে উপার্জনের পথও (Income) প্রসস্থ হয়েছে। অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই কাজ হারিয়ে বেকারত্বের জ্বালায় ছটফট করেছে। সেই সময় থেকেই অনেকে স্টার্টআপ ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। পোলট্রি ফার্মিংও (Poltry Firming) উঠে এসেছে এই স্টার্টআপের তালিকায়। পোলট্রি ফার্মিং-এর (Poultry Firming) জন্য বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। আপনি যদি এই ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার কয়েকটি জিনিস বিশেষভাবে মেনে চলতে হবে। এই ব্যবসা (Business Idea) যদি আপনি ঠিক মত করতে পারেন তাহলে এখান থেকে আয়ের পথও (Income) প্রসস্থ হবে। 

প্রসঙ্গত, পোলট্রি (Poultry) কথাটির অর্থ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন হাঁস, মুরগী, কোয়েল, এমু, টার্কি ইত্যাদি। ভারতে এই পোলট্রি পালনের ৯০ শতাংশই হল মুরগী পালন। কারণ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের উৎস বলে মুরগীর মাংস ও ডিমের চাহিদা যথেষ্ট বেশী। তবে ইদানিং কোয়েল, টার্কি, এমু জাতীয় পাখির চাহিদা বেড়েছে বহু অংশে। উল্লেখ্য, এই পোলট্রি ফার্মিং গ্রামীণ যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান যোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক পোলট্রি ফার্মিং-র ব্যবসায় হাতেখড়ি দিতে হলে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। 

আরও পড়ুন-Business Idea-মোটা আয়ের পথ খুঁজছেন? তাহলে শুরু করুন কড়কনাথ মুরগীর ব্যবসা,৫৩ হাজারের বিনিময়ে পাবেন ৩৫ লাখ

আরও পড়ুন-Poultry Farming With 50k-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে শুরু করুন পোলট্রি ফার্মিং ব্যবসা, মাসে পান ১ লাখ

আরও পড়ুন-Startup Business Tips-কোভিডে কাজ হারানোর যন্ত্রনা, ঘরে বসে উপার্জনের সুযোগ

উৎপাদন প্রকার - 

প্রথমে  আপনার পোলট্রি খামারে কি ধরনের হাঁস ও মুরগী উৎপাদন করবেন, তা নির্ধারণ করতে হবে। যদি মাংস উৎপাদন করতে চান তাহলে ব্রয়লার মুরগী হবে আদর্শ চয়েজস। শুধু মাংসই নয়, যদি বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদন করতে চান তাহলেও এই মুরগীই আপনাকে প্রতিপালন করতে হবে। সরাসরি স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে পোলট্রি পণ্য বিক্রি করতে পারেন। উৎপাদন অনুসারে সঠিক হাঁস-মুরগীর জাত নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। 

খামারের অবস্থান - 

আপনার ব্যবসার জন্য খামারের সঠিক অবস্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে, যেখানে প্রয়োজনীয় সমস্ত সুবিধা পাওয়া যাবে এবং সেই জায়গাটি অবশ্যই ব্যবসার পক্ষে উপযুক্ত হতে হবে। শহর থেকে সামান্য দূরে এই খামারের অবস্থান হলে সেখানে জমিও বেশ সস্তায় মিলবে। কিন্তু শহর শহরের ভিরতে যদি খামারের অবস্থান হয় তাহলে জমির দাম হয়ত একটু বেশি হবে কিন্তু আগামী দিনে ব্যবসার পথ শহরেই কিন্তু বিস্তারিত হওয়ার সুযোগ বেশী। তবে আবাসিক এলাকায় খামার স্থাপন এড়িয়ে চলা উচিত। হাঁস-মুরগীর খামার থেকে দুর্গন্ধ বেড় হয়। এতে এলাকাবাসীর অসুবিধা হয়। আর খামার নির্বাচনের সময় পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে খেয়াল রাখা আবশ্যক।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম - আপনাকে পোলট্রে খামারের জন্য বেশ কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। যেমন -

ফিডার
বাসা
খাঁচা
বাক্স
ডিম ট্রে
আলোর যন্ত্র
হিটার
বায়ুচলাচল পদ্ধতি
বর্জ্য নিষ্পত্তি সিস্টেম

ঘর নির্মাণ - 

খামারের অবস্থান নির্বাচন করার পর  হাঁস ও মুরগীর জন্য একটি ভাল ঘর নির্মাণ করা জরুরি। নতুন ঘরে সব প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ব্রয়লার পোল্ট্রির জন্য গড়ে প্রায় ২.৫ বর্গ ফুট এবং লেয়ার পোলট্রির জন্য প্রায় ৪ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। যদি আপনি ২০০ টি স্তর চান তবে আপনাকে ৮০০ বর্গ ফুট জায়গা অবশ্যই রাখতে হবে। খাঁচা পদ্ধতিতে প্রত্যেক প্রাণীর জন্য প্রায় ৪ বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন। খামারে সঠিক পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থা যাতে থাকে সেই দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। 

শ্রমিক - 

মুরগীর সংখ্যার উপর নির্ভর করবে আপনি পোলট্রি ফার্মিং-র জন্য কত পরিমান শ্রমিক নিয়োগ করবেন। একজন শিক্ষানবিশ হিসাবে যদি এই পোলট্রি ফার্মিং শুরু করেন তাহলে প্রাথমিকভাবে ২০০ থেকে ৫০০ টি মুরগী নিয়ে এই ব্যবসার ময়দানে নামুন। নিজের খামার অবশ্যই নিজেই পরিচালনা করুন। যদি বেশী সংখ্যক মুরগী নিয়ে এই ব্যবসা করতে চান তাহলে কিন্তু শ্রমিক সংখ্যাও সেক্ষেত্রে বাড়াতে হবে। 

মুরগীর বাচ্চা ক্রয় 

পোলট্রি ফার্মিং-এর জন্য সবকিছু প্রস্তুত করার পর আপনার এলাকায় বিশ্বস্ত জায়গা থেকে ভালো মানের মুরগীর বাচ্চা কিনুন এবং তাদের যত্ন নেওয়া শুরু করুন। যদি আপনার  কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে কখনই সেই বাচ্চাদের সংখ্যা ৫০০ -এর বেশি রবেন না। 

প্রতিপালন 

সুষম খাদ্য প্রদান হাঁস-মুরগী চাষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বাজার থেকে খাবার  কিনতে পারেন অথবা নিজেও হাঁস মুরগীর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে খাওয়াতে পারবেন। 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা  

মুরগীদের বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রবণতা দেখা যায়। তাদের সর্বদা তাদের তাজা জল এবং খাদ্য দিন এবং সময়মত টিকা প্রদান আবশ্যক।

বিনিয়োগ

পোল্ট্রি চাষের জন্য আপনি নিজের টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন বা আপনি ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ব্যাংক পোলট্রি  চাষের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে।

মুরগী পালন পদ্ধতি প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যেমন –

(১) মুক্তাঙ্গন পদ্ধতি - এই পদ্ধতিতে সাধারণত দেশি মুরগীই চাষ করা হয়। তবে প্রতি মুরগীকে গড়ে ৩৫ -৫০ গ্রাম করে প্রতিদিন সুষম দানা খাদ্য খাওয়ালে ডিমের পরিমাণ বাড়ে। এই খাবার বাজারে যেমন কিনতে পাওয়া যায় তেমনই আবার কম খরচে বাড়িতেও বানানো যায়।  

(২) অর্ধ-আবৃতাঙ্গন পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে মুরগী স্বাধীনভাবে বিচরণ করলেও একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। এই পদ্ধতিতে মুরগীর ঘর তৈরী করতে হয় ও ঘর সংলগ্ন কিছুটা জায়গা ঘেরা থাকে যাতে মুরগীগুলি স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে।

(৩) আবৃতাঙ্গন পদ্ধতি, এই পদ্ধতি আবার দুই প্রকারের –

 ডিপলিটার পদ্ধতি

খাঁচায় মুরগী পালন

ডিম উৎপাদন লাভজনক করতে পোলট্রি খামারে মুরগীর বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন। মুরগীর সাথে মোরগের প্রতিপালন সমান গুরুত্বের। পোলট্রি মুরগী পালনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত -

মুরগীর দেহের ওজন কোনভাবেই ২৫ থেকে ৫০ গ্রামের বেশি না বাড়ে। দেহে ফ্যাট বেশী জমলে পরবর্তীকালে ডিমের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। মুরগী ও মোরগের অনুপাত ৫ : ১ রাখতে হবে। ঘরের মেঝে থেকে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি উপরে ৫ থেকে ৬ টি মুরগীর জন্য একটি করে ডিম পাড়ার বাক্স রাখতে হবে। সেই বাক্সে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করতে হবে যাতে ডিম ভেঙে না যায়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লিটার পরিবর্তন করতে হবে। ডিম পাড়ার সময় প্রাকৃতিক আলো ছাড়াও কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক আলো ও কৃত্তিম আলোর মোট সময় প্রায় ১৭ ঘন্টা হওয়া উচিৎ। ভোর বেলা ও সন্ধ্যের সময় এই কৃত্তিম আলো দিতে হবে।

মুরগী পালন লাভজনক করতে খাবারের দিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন। মুক্তাঙ্গনে ও খামারে পালিত মুরগীকে খাবারের উচ্ছিষ্ট, পোকামাকড়, সবজির খোসা, মুড়ি, চাল, ক্ষুদ - কুঁড়ো, ভাতের মাড় ইত্যাদির সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ লবন মিশিয়ে দিলে ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মুরগীর খাবারে গেঁড়ি গুগলি থাকলে মুরগীর প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা মেটে ও ডিমের খোসা মোটা হয়, সহজে ভাঙে না। মুরগীকে নিয়মিত সবুজ খাদ্যের সরবরাহ দিলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়। 

খামারের মুরগীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন।মুরগীর খাবারের পাত্রে সপ্তাহে একদিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও জলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।মুরগীকে সবসময় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা উচিত। গরমের সময় অবশ্যই ঠান্ডা বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা উচিত। জলের সাথে অনেক সময় জীবাণুনাশক মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মুরগীর জলের জায়গা উলটে মেঝে বা লিটার যাতে ভিজে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

মুরগীর রোগ -

ব্যাকটেরিয়া রোগ: 

ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলি ব্যাকটেরিয়া রোগ হিসাবে পরিচিত। কলেরা, পুলোরামের মত রোগ গুলো এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

ছত্রাকের রোগ 

এই ধরনের রোগ ছত্রাকের মাধ্যমে হাঁস-মুরগীদের আক্রমণ করে। স্পারজিলিসিস, ফিভাস, থ্র্যাশ, ইত্যাদি রয়েছে এই ধরনের রোগের তালিকায়।

পরজীবী রোগ 

মাইক্রোপ্লাজোসিস, কোলবিসিলিসিস, স্টেপটোক্যাকিচ, কোকিসিওডিসিস, এস্পিজিলিসিস, ওয়ার্মস ইত্যাদি রোগ গুলো হাঁস ও মুরগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

ব্রয়লার মুরগীর ঔষধ 

১ দিন – গ্লুকোজ (৫০গ্রাম), ইলেকট্রোলাইট (২০ গ্রাম) ও ডিসট্রেস পাউডার (০.৫)গ্রাম – ১০০ টি পাখির জন্য পানীয় জলে মেশাতে হবে।
২-৪ দিন – সকালে জলে ভিটামিন ও বিকেলে জলে অ্যান্টিবায়োটিক।
৫-৭ দিন – পানীয় জলে ভিটামিন-A ও ভিটামিন-B কমপ্লেক্স।
১২-১৪ দিন - পানীয় জলে ভিটামিন।
১৫-২১ দিন – খাদ্য বা পানীয় জলে লিভার টনিক।
২৯-৩২ দিন – সকালের জলে ভিটামিন ও বিকেলের জলে বা খাবারে লিভার টনিক।
৩৩-৩৫ দিন – জলে বা খাদ্যে লিভার টনিক।

টীকাকরণ 

প্রথম বা দ্বিতীয় দিন – মরেক্স রোগের টীকা।
ষষ্ঠ বা সপ্তম দিন – রানীক্ষেত রোগের টীকা
চোদ্দ তম দিন – গামবোর রোগের টীকা।
একুশ-তেইশ তম দিন – রানীক্ষেত রোগের প্রতিষেধক টীকা।
আঠাশ তম দিনের মধ্যে – ককসিডিয়া নাশক ঔষধ প্রতিষেধক হিসেবে।