সংক্ষিপ্ত
১০৭ বছরের পুরনো সংস্থা হিন্দুজা। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয়েছে বিবাদ। হিন্দুজা পরিবার কড়া নেড়েছে আইনের দরজায়।
সম্পত্তি নিয়ে লড়াই(Feud against property), ভাইয়ে-ভাইয়ে বিবাদ আজ আর শুধু বোকাবাক্সতেই বন্দী নয়। বাস্তব জীবনেও এই রকম বহু ঘটনার সাক্ষী থাকি আমরা। এবার সম্পত্তি নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত চচার ব্রিটিশ ধনকুবের। উল্লেখ্য সম্পর্কে তারা চার ভাই। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আইনের দরজায় কড়া নেড়েছেন চার ভাই। বর্তমানে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে একপ্রকার আইনি সঙ্ঘাত চলছে হিন্দুজা পরিবারের অন্দরে(Hinduja family)। হিন্দুজা গ্রুপের(Hinduja Group) বিভিন্ন সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি ডলার যা ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা। আর তার ভাগাভাগি নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে চার ভাইয়ের মধ্যে। শ্রীচাঁদ, গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোক-এই চার ভাইয়ের মধ্যে চলছে পারিবারিক সম্পত্তি বন্টন নিয়ে টানাপোড়েন। হিন্দুজা শিল্পগোষ্ঠীর বয়স ১০৭ বছর(107 Years Old Company)। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠতা ছিলেন প্রয়াত পরমানন্দ হিন্দুজা(Paromananda Hinduja)। এই হিন্দুজা ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বছর খানেক আগেই আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বড়ভাই শ্রীচাঁদ(Shree Chand)।
পরমানন্দের প্রয়াণের পর থেকে যৌথ ভাবেই পারিবারিক ব্যবসা(Family Business) চালিয়েছেন চার ভাই। গাড়ি, ব্যাঙ্কিং, গ্যাস, তেল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৮টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত হিন্দুজার ব্যবসা। প্রতি বছর ব্রিটেনের সেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় উঠে আসে হিন্দুজা ভাইদের নাম। কিন্তু সুখের সেই সংসারেই এখন অশান্তির মেঘের ঘনঘটা। ৮৫ বছরের শ্রীচাঁদ হিন্দুজা বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। শুধু অসুস্থই নন, স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন তিনি। তাঁর হয়ে আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই মেয়ে বিনু এবং শানু। শানুর ছেলে করমই আদালতে তাঁর দাদুর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার তদারকি করছেন।
আরও পড়ুন-1 cr Property-নিষ্ঠার পুরস্কার পেলেন রিক্সাওয়ালা,১ কোটি টাকার সম্পত্তি পেলেন বুধা সামাল
সম্প্রতি জেনিভায় একটি সাক্ষাৎকারে করম বলেছেন, দাদু বলতেন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে সপ্তাহে এক বার সদস্যদের একত্রিত হয়ে সিনেমা দেখা উচিত। তাঁরা নাকি দাদুর সেই কথা মান্য করতেন। সকলে একত্রিত সকলের সুখ-দুঃখের সাথী হতেন তাঁরা। কিন্তু এ ভাবে কয়েক দশক ধরে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলেও এ বার হিন্দুজা সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেও স্বীকার করে নেন নাতি করম। ২০১৪ সালের একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ঘিরেই হিন্দুজা পরিবারে সম্পত্তি ভাগ নিয়ে বাকবিতন্ডার সূচনা। চার হিন্দুজা ভাইয়ের সই করা ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, একজন ভাইয়ের হাতে যদি সম্পত্তির মালিকানা থাকে সেটাই চার ভাইয়ের সম্পত্তি হবে। কিন্তু সেই কথা মানতে নারাজ শ্রীচাঁদ হিন্দুজা ও তাঁর কন্যাদ্বয়। সেই ঘোষণাপত্রে এমনটাও বলা হয়েছিল যে,চার ভাই প্রত্যেকেই সেই সম্পত্তির তদারকি করতে পারবে। কিন্তু শ্রীচাঁদ এবং তাঁর কন্যাদের দাবি, ওই যৌথ ঘোষণাপত্রের কোনও আইনি বৈধতা নেই। গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোক হিন্দুজা সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা এখনও অখণ্ড হিন্দুজা সাম্রাজ্যের তত্ত্বেই অনড় রয়েছেন। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর পারিবারিক ব্যবসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কে রামচন্দ্রন অবশ্য মনে করেন শেষ পর্যন্ত তাঁদের পক্ষে পুরনো নীতি বজায় রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোকের সমাজতান্ত্রিক ভাবনা বাস্তবায়িত করা সত্যিই খুবই কঠিন। আপাতত শ্রীচাঁদ হিন্দুজার নামে রয়েছে ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ডের হিন্দুজা ব্যাঙ্ক তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি। আগামী দিনে চার ভাইয়ের সম্পত্তির লড়াই জারি থাকে নাকি ফের একসুতোয় ব্যবসাকে বাঁধবে তা তো সময়ই বলবে।