সংক্ষিপ্ত
কয়েক মাস রিজার্ভ ব্যঙ্কের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাঙ্ক নোট’-এর সংজ্ঞা বদলানোর সময় এসেছে এবং ডিজিটাল মুদ্রাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে। এর মাধ্যমেই কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এবার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে আসতে চলেছে সরকার।
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) সঙ্গে টেক্কা দিতে এবার নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা (Digital Curruency) চালু করতে চলেছে ভারত। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এই মুদ্রা আনা হবে। মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট (Budget 2022) পেশের সময় একথা জানান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (FM Nirmala Sitharaman Speech on Budget 2022)। কিন্তু, এই ডিজিটাল মুদ্রা ঠিক কী? পাশাপাশি এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি আছে কি না? এই ধরনের অনেক প্রশ্নই রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। ২২ জুলাই এনিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নর টি রবি শংকর। কীভাবে এই রুপি ব্যবহার করা হয়, কারা এর সুবিধা পাবেন এই সব বিষয়ই তুলে ধরেছিলেন তিনি।
কয়েক মাস রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Reserve Bank of India) তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাঙ্ক নোট’-এর সংজ্ঞা বদলানোর সময় এসেছে এবং ডিজিটাল মুদ্রাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে। এর মাধ্যমেই কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এবার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (Central Bank Digital Currency) নিয়ে আসতে চলেছে সরকার। আর বাজেটেই সেকথা জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি বিষয়টি ঠিক কী?
CBDC বিষয়টি আসলে তেমন কিছুই নয়। আমাদের ব্যাগে যে টাকা থাকে তার সঙ্গে এই ডিজিটাল রুপির কোনও পার্থক্য নেই। শুধুমাত্র এটি মানিব্যাগে থাকে না, তা থাকে ডিজিটাল মাধ্যমে। ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যেই থাকে এই টাকা। আর সেই টাকা সুপারভাইজ করে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। ভারতের ক্ষেত্রে আরবিআই এই টাকা সুপারভাইজ করবে। ব্যাঙ্ককেও এটি তদারকি করার ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে। এরপর থেকে নগদ টাকার পরিবর্তে এই ডিজিটাল রুপি ব্যবহারের উপর গ্রাহকদের বেশি জোর দিতে পারে ব্যাঙ্ক। তবে সেক্ষেত্রে নগদ টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা থাকবে না। এখনও যেমনভাবে সবাই ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেন আবার তোলেন তখনও একইভাবে তা করতে পারবেন।
ডিজিটাল কারেন্সি আর ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্য কী?
অনেক দিন ধরেই ডিজিটাল মাধ্যমে বেশ কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি জোরদার ভাবে রয়েছে। বিটকয়েন, ম্যাটিক, ইথেরিয়ামের মতো কারেন্সি অনেকেই ব্যবহার করেন। এগুলির সঙ্গে ডিজিটাল কারেন্সি বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সির (CBDC) প্রধান পার্থক্য হল ক্রিপ্টোকারেন্সি মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি দেশীয় সরকার দ্বারা বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল মুদ্রা।
আরও পড়ুন- মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ জোর, ঘোষণা ৩টি প্রকল্পের
কেন RBI এই মুদ্রা চালু করতে আগ্রহী?
ইতিমধ্যেই বহু দেশে ডিজিটাল মুদ্রা চালু হয়েছে। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই দৌড়ে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। চিনও সম্প্রতি জোর দিয়েছে ডিজিটাল মুদ্রার উপর। আগামী দিনে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাজারের অনেকটা দখল করতে চলেছে বলে আন্দাজ। এই অবস্থায় আরবিআই যদি ডিজিটাল মুদ্রার কথা না ভাবে, তাহলে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যঙ্কগুলির বিশ্বাস, টাকা ছাপানোর জন্য যে পরিমাণ খরচ হয় তার থেকে ডিজিটাল কারেন্সি ইস্যু করায় খরচ অনেক কম। আর আরবিআই-এর ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি করতে ও তা বণ্টন করতে কোনও খরচ হবে না। সবথেকে বড় বিষয় হল নগদ টাকার হিসেব রাখা অনেক সময় খুব কঠিন হয়ে যায়। যার ফলে বাড়ে কালো টাকার রমরমা। আর ডিজিটাল কারেন্সি হলে তা মনিটর করবে আরবিআই। এর ফলে তার হিসেব রাখাও খুবই সহজ হবে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন- ক্রিপ্টোর পাল্টা, চালু হচ্ছে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি, ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
ডিজিটাল কারেন্সির ঝুঁকির দিকগুলি কী কী?
একবার ডিজিটাল মুদ্রা সহজলভ্য হয়ে গেলে অনেকেই তাঁদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতে পারেন। এখন সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখেন সুরক্ষার জন্য। আর যখনই ডিজিটাল মুদ্রার সঙ্গে মানুষের পরিচয় হবে আর যখন তাঁরা জানতে পারবেন যে ডিজিটাল মুদ্রাও ওই একই ধরনের সুরক্ষা দিতে পারবে তখনই বহু গ্রাহক নগদ টাকাকে ডিজিটাল মুদ্রায় রূপান্তরিত করে নিতে পারেন। ব্যঙ্কের তরফে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ কম পরিমাণ ক্যাশ থাকলে সেক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়াতে সমস্যা হবে। ব্যাঙ্কের কাছে টাকা না থাকলে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই সেক্ষেত্রে আরবিআই এমন কিছু ঘোষণা করতে পারে যে কোনও ব্যক্তি নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা কোনওভাবেই ডিজিটাল কারেন্সিতে পরিণত করতে পারবেন না। তাঁকে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাখতেই হবে।
কী কী জল্পনা রয়েছে?
ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। অনেকেই মনে করছেন, ডিজিটাল রুপি হিসেবে কোনও ব্যক্তি কত পরিমাণ টাকা রাখতে পারে তা নির্ধারিত করে দিতে পারে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি। এর ফলে ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলার প্রবণতাকে বন্ধ করা সম্ভব হবে। আরও কিছু মানুষের বিশ্বাস যে, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি ডিজিটাল কারেন্সির ক্ষেত্রে নেগেটিভ পেনাল্টি ধার্য করতে পারে। সাধারণ মানুষ যাতে বেশি পরিমাণে ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার সেই বিষয়ে তাদের উৎসাহ দিতে এই উদ্যোগ।