সংক্ষিপ্ত
ওমিক্রন যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে শেয়ার মার্কের্টে যে বড়সড় প্রভাব পড়বে তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক শেয়ার মার্কেটে ধস নামবে না। বরং আর্থিক পরিকাঠামো একটু উন্নত হলেই মাথা তুলে দাঁড়াবে বাজার।
নতুন বছর শুরুর(New Year) প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি মানেই সেলিব্রেশন মুড অন। তারপরের দিন রবিবার। সব ছুটির আমেজ কাটিয়ে সোমবার থেকেই প্রকৃত অর্থে নতুন বছর, ২০২২ সালের কর্মজীবন শুরু। একদিকে যেমন শুরু কর্মজীবন তেমনই অন্যদিকে শেয়ার মার্কেটে(Share Market) ট্রেডিং-র সময়। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের র প্রথম সোমবার লাভের মুখ দেখেই শেয়ার মার্কেট ট্রেডিং সেশনে প্রবেশ করে। সোমবার শেয়ার মার্কেট খোলার পর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে এস অ্যান্ড পি-র সূচক ৫৮ হাজার ৫০০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছিল। অন্যদিকে ন্য়াশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে নিফটি ৫০-এর সূচক রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ পয়েন্টের ওপরে। দুটি সূচকই ০.৬০ শতাংশে এসে বন্ধ হয়। ব্যাঙ্ক নিফটির সূচক ছিল ৩৫ হাজার ৬০০ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে শেয়ার মার্কেটের বাজার দর ছিল উর্ধ্বমুখীই। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ সেনসেক্সে পৌঁছে বাজিমাত করেছে টেক মহিন্দ্রা। ১.২ শতাংশ পর্যন্ত সেনসেক্স অর্জন করেছে এই সংস্থা। অন্যদিকে সেনসেক্স অর্জনে লাভবানের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে টিসিএস ও অইসিএল টেকনোলজি। তবে মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, আলট্রাটেক সিমেন্টের স্টক সেনসেক্সের কিছুটা নীচে ছিল।
দেশের সর্বোচ্চ ব্যআঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তরফে জানান হয়েছে, ২০২১ সালের শেষ ৩ মাস বিভিন্ন নামী দামী সংস্থার পক্ষ থেকে মোটা টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। বিনিয়োগের হার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় সংস্থাগুলোও তাদের একটা মজবুত ভিত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে পাওয়া তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বার্ষিক ০.৫ শতাংশ হারে ক্রেডিট গ্রোথ বৃদ্ধি পেয়েছে যা গত বছরে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। তবে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে এই ক্রেডিটের পরিমান ১.৮ শতাংশ হারে কমে গিয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এক্সজিকিউটিভরা জানিয়েছেন ভারতীয় সংস্থাগুলোর এখনও ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ২০২৮-২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লিভারেজের স্তর রয়েছে ৪৮ শতাংশে। এর থেকে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ম্যাক্রো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পুনরায় কর্পোরেট ঋণ নিলে উচ্চতর বিনিয়োগের মাত্রা আরও বাড়বে।
তবে ওমিক্রনের(Omicron) বাড়বাড়ন্তের জেরে শেয়ার মার্কেটের আগমী দিনের পরিস্থিতি কেমন থাকবে সেটা নিয়ে কিন্তু লগ্নিকারীদের মধ্যে একটা বড় রকমের দুশ্চিন্তা রয়েছে। শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২১ সালের মত ঘটনা হয়তো নাও ঘটতে পারে শেয়ার মার্কেটের লগ্নিকারীদের সঙ্গে। করোনার কামড়ে যেভাবে বারংবার শেয়ার মার্কের্টে ধস নেমেছিল তার থেকে শিক্ষা নিয়েই সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে শেয়ার মার্কেট। শেয়ার মার্কেট থেকে ভাল রিটার্ন পাওয়ার আশায় লগ্নি করা হয় ঠিকই, তবে চলতি বছরে হয়তো আশানোরুপ রিটার্ন না পাওয়ারই সম্ভবনা বেশী লগ্নিকারীদের। ওমিক্রন যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে শেয়ার মার্কের্টে যে বড়সড় প্রভাব পড়বে তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখছে না। করোনা পরিস্থিতির জেরে আগামী দিনে শেয়ার মার্কেট যে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত সেগুলো হল, জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি থেকে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভবনা, চাকরি, ব্যবসা থেকে উৎপাদন ও চাহিদার ওপর আঘাত ও বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা। একদিকে করোনা পরিস্থিতির জেরে শেয়ার বাজার এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত হলেও বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ঠ আশাবাদী। তাঁদের মতে পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক শেয়ার মার্কেটে ধস নামবে না। বরং আর্থিক পরিকাঠামো একটু উন্নত হলেই মাথা তুলে দাঁড়াবে শেয়ার মার্কেট।
আরও পড়ুন-২৪ ডিসেম্বর থেকে বড়দিনের ছুটি স্টক মার্কেটে, অন্যদিকে ২৩ ডিসেম্বর থেকেই বন্ধ বন্ড মার্কেট
উদাহরণ স্বরূপ বললে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে জিএসটি থেকে একটা মোটা টাকা এসেছে কেন্দ্রের ঘরে। তেমন আবার অন্যদিকে গাড়ি শিল্পে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেমিকনডাক্টর চিপের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি তৈরি হয়নি তবে অন্যদিকে আবার আবাসনের চাহিদা গত কয়েক মাসে বেশ ভালই বেড়েছে। সব মিলিয়ে এগুলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘুরে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সব কিছুর মাঝেও কিন্তু ওমিক্রন আতঙ্ক মোটেও খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। পুরনায় যদি কর্মক্ষেত্রে করোনার অশুভ ছায়া পড়ে তাহলে বাড়বে বেকারত্ব। অনিশ্চয়তার দোলাচলে বছর শরুর প্রথম থেকেই শেয়ার মার্কেট কিছুটা হলেও দুর্বল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।