সংক্ষিপ্ত

অর্থাৎ, হিসেব বলে দিচ্ছে স্কুলছুট বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও। 

রাজ্যে যেন ক্রমশই বাড়ছে ড্রপ আউটের সংখ্যা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নাম নথিভুক্তই করল না ১০-১৫% পড়ুয়া।

অর্থাৎ, হিসেব বলে দিচ্ছে স্কুলছুট বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও। ফলে, অন্যান্য বছরের তুলনায় একলাফে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গেল। চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষর বেশি। কিন্তু সেটা বিশাল কোনও সংখ্যাই নয় আগের বছরের তুলনায়। কারণ, গতবছর তা ছিল প্রায় আট লক্ষের কাছাকাছি।

জানা যাচ্ছে, মূলত যে সমস্ত পড়ুয়ারা গত ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারাই তো চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে বসবেন। দেখা যাচ্ছে, গত ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন মোট ৫,৪৮,৯০৯ জন। স্বভাবতই, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা তাদের।

কিন্তু তার তুলনায় অনেক কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন ক্লাস ইলেভেনে। তাই চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিকে নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে কম পড়ুয়া থাকাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছে শিক্ষা সংসদ।

অন্যদিকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, ‘তরুণের স্বপ্ন’প্রকল্পের ১০ হাজার টাকা হাতে পাওয়ার পরেই উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বহু ছাত্র-ছাত্রী। সেই একই ছবি ধরা পড়ছে একাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রেও। মূলত, উপযুক্ত পঠনপাঠনের পরিকাঠামো না থাকার কারণেই পড়ুয়ারা আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া একাধিক সরকারি স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতও সঠিক নয়। তাই পড়াশোনার মানোন্নয়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

এই যেমন একাদশ শ্রেণিতে প্রথম সেমিস্টারে যত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল, ততজন কিন্তু পরীক্ষাও দিয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, পুজোর পরে অ্যাকাউন্টে ট্যাব বা মোবাইলের টাকা ঢুকতেই সেই পড়ুয়াদের মধ্যে একটা সংখ্যা ক্রমশই কমতে থাকে স্কুলগুলিতে। এদিকে স্কুলের তরফ থেকে বিভিন্ন পড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা জানায় যে, তারা আর পড়াশোনা করতে চায়না।

পড়ুয়াদের পরিষ্কার বক্তব্য, পারিবারিক সমস্যা এবং আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবেই তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কী বলছে? তাদের মতে, যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত ‘তরুণের স্বপ্ন’প্রকল্পের টাকা হাতে আসছে, ততদিন পর্যন্ত পড়ুয়ারা সবাই স্কুলে উপস্থিত থাকছে। কিন্তু তারপরেই হটাৎ করে রাজ্যের প্রত্যেকটি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে দিচ্ছে।

সূত্রের খবর, বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, সেশনের শুরুতেই ৩-৪ মাস যত সংখ্যক পড়ুয়া স্কুলে আসছে, তার মধ্যে অনেকেই আবার ১০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে চলে এলেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। বহু ছাত্রছাত্রী এমনও আছে, যারা নকল বিল জমা দিয়ে তারপর আর স্কুলের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

শুধু তাই নয়, নাম নথিভুক্তির প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করে না তারা। এখন তো একাদশ শ্রেণিতেও ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন জেলা থেকে ডি-আইদের দেওয়া যে তথ্য বিকাশ ভবনে এসে পৌঁছেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নকল বিল জমা দিয়ে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক হারেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের আশঙ্কা, ফেব্রুয়ারি মাসে একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা রয়েছে। সেখানেও বহু পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করবে না বলেই ধারণা তাদের। তার কারণ, ইতিমধ্যেই পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে ক্লাস ইলেভেনে। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে যে পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

বলা হয়, স্কুল লেভেলে পড়াশোনা শুধু নম্বরের জন্য নয়। ভবিষ্যতে নিজের ক্যারিয়ার এবং উচ্চশিক্ষা, যে কোনও ক্ষেত্রেই স্কুলের পড়াশোনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হাতে নগদ টাকা পেয়ে দুম করে স্কুল ছেড়ে দেওয়া এবং পরীক্ষাতে না বসা, এতে তো আসলে ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি। রাজ্যের শিক্ষার এই বেহাল দশা তো আগামীদিনের জন্য রীতিমতো চিন্তার বিষয়। শেষপর্যন্ত কি স্কুলছুট আটকাতে পারবে শিক্ষা দফতর?

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।