সংক্ষিপ্ত
শনিবার কোভিড-১৯'এর থেকেও দ্রুত ছড়িয়েছিল খবরটা
প্রথম কোভিড-১৯ রোগী বাদুড়ের সঙ্গে সঙ্গম করেছিলেন
সেখান থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ
খবরটি কি আদৌ সত্যি, কী জানা গেল তথ্যানুসন্ধানে
শনিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছিল খবরটা। দাবি করা হয়েছিল, করোনাভাইরাস-এর একেবারে প্রথম রোগী নাকি বাদুড়ের সঙ্গে যৌন মিলন করেছিলেন, আর তার থেকেই তাঁর দেহে করোনাভাইরাস সংক্রামিত হয়েছিল। আরও দাবি করা হয়েছিল, চিনা কর্তৃপক্ষই এই কথা জানিয়েছে। খবরটি কি আদৌ সত্যি?
এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে বিশদ তথ্যানুসন্ধানের পর জানা গিয়েছে খবরটি সর্বৈব ভুয়ো। বস্তুত, খবরটির উৎস, ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি বলে একটি ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট। তাদের থেকেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকেই প্রথম সারির কিছু সংবাদমাধ্যমের নাম করে খবরটি ছড়িয়েছেন।
খবরটিতে কী বলা হয়েছিল?
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাং নামে হুবেই প্রদেশের ২৪ বছরের এক যুবকই সর্বপ্রথম কোভিড-১৯ রোগী বলে জানিয়েছে চিন সরকার। গত ১৭ নভেম্বর তার দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ওই ব্যক্তি বাদুড়-সহ বেশ কয়েকটি প্রাণীর সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় মেতেছিলেন। আর তারপরই এই রোগে আক্রান্ত হন।
প্রতিবেদনটিকে আরও বাস্তবোচিত করার জন্য ওই রোগীর বাবার মন্তব্যও দেওয়া হয়েছিল। তাং-এর বাবার মুখে দিয়ে বলানো হয়েছিল, তিনি তার ছেলের কাজে লজ্জিত। কিন্তু, তাং উপযুক্ত স্ত্রী খুঁজে না পেয়েই এই কাজে বাধ্য হয়েছিল। নাহলে তাকে সমকামী হতে হত। তাং-এর বাবার একটি ছবিও প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ করা হয়।
আরও বলা হয়েছিল, বাদুড় এবং অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গম করা দক্ষিণ চিনের নাগরিকদের সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু প্রথম রোগীর ওই দশা হওয়ার পর চিন সরকার নাগরিকদের বাদুড়ের সঙ্গে সবরকম যৌন সম্পর্ক স্থাপন থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। না মানলে জরিমানা বা জেল হতে পারে।
এই ছবিটিই প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর বাবার ছবি বলে দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে
কেন খবরটি ভুয়ো?
প্রথমত, চিন প্রশাসন এরকম কিছু বলে থাকলে তা তাদের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু, এরকম কোনও খবর সেখানে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, যে ওয়েবসাইটটি এই অদ্ভূত খবরটির উৎস, সেই 'ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট' বস্তুত একটি ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট। ইসরাইল-এর রাজধানী তেল আবিব থেকে একদল মার্কিন ইহুদি জায়নবাদী ব্যবসায়ী এই সাইটি চালায়। চিন এবং ইসলামি বিশ্ব-কে ব্যঙ্গ করে গল্পের গরু গাছে তুলতে এদের জুড়ি নেই। তৃতীয়ত, প্রথম রোগীর বাবার ছবি হিসাবে যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা 'ব্য়াক ট্রেস' করে অর্থাৎ তার অতীত অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে, ওই ছবিটি গত বছর হংকং ফ্রি প্রেসের একটি সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ের উপর লেখা নিবন্ধের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, করোনাভাইরাস সংক্রমণ যৌন সঙ্গমের মারফত ছড়ায়, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত, একমাত্র শ্বাসযন্ত্রের সংস্পর্শে না এলে সার্স-কোভ-২ বিপজ্জনক নয়।
শুধু, এই একটি ওয়েবসাইট নয়, এই ধরণের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেই চিনের প্রতি বিদ্বেষ থেকে এই মুহূর্তে একের পর এক ভুয়ো খবর প্রকাশিত হয়ে চলেছে। অধিকাংশই মার্কিনি। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই একাধিকবার এই ভাইরাস-কে চিনা ভাইরাস বলে উল্লেখ করেছেন। এই ভাইরাস চিন সেনাবাহিনীর জৈব অস্ত্র তৈরির ফল, দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মামলাও হয়েছে।