সংক্ষিপ্ত
যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
গণইস্তফা দিলেন ১৪ জন সরকারি চিকিৎসক
করোনা-কালে দারুণ চাপে সরকার
ফোন গেল মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে
উত্তরপ্রদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ। আর এই সংক্রমণ বৃদ্ধির দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে দিবারাত্র কাজ করা ডাক্তারদের উপর। যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠল। উন্নাও জেলায় গণইস্তফা দিলেন ১৪ জন সরকারি চিকিৎসক। তাদের দাবি, কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির দায় তাঁদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। তাদের একের পর এক পর্যালোচনা সভার মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে, সেই সঙ্গে রয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের খারাপ ব্যবহার।
পদত্যাগী ডাক্তাররা উন্নাও জেলার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলির দায়িত্বে ছিলেন, বলে জানা গিয়েছে। এই কেন্দ্রগুলিই ওই এলাকার গ্রামবাসীদের কোভিড-১৯ চিকিত্সার একমাত্র ভরসা। তাই এতজন ডাক্তার একসঙ্গে কাজ ছেড়ে দেওয়ায়, এমনতিতেই বেহাল অবস্থায় থাকা ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।
১৪ জন চিকিত্সকের মধ্যে ১১ জন একটি যৌথ পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে বুধবার সন্ধ্যায় উন্নাও-এর চিফ মেডিকেল অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে তার সহকারীর হাতে সেই পদত্যাগপত্র তুলে দেন। সেই চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, করোনা মহামারি চলাকালীন তাঁরা প্রত্যেকে কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু তারপরেও তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চব্বিশ ঘন্টাই কাজ করলেও, প্রশাসনিক কর্তারা এমন ব্যবহার করছেন যেন মনে হচ্ছে ডাক্তাররা কেউ 'কাজ করছেন না' বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। জেলাশাসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের, এমনকি এসডিএম এবং তহসিলদার - সকলের কাছেই তাঁদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে এবং একের পর এক পর্যালোচনা সভায় যোগ দিতে দিতে তাঁরা ক্লান্ত।
পদত্যাগী ডাক্তারদের অন্যতম, ডাক্তার শরদ বৈশ্য জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের একেকটি দল দুপুরবেলা বের হতেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের খুঁজে বার করে তাদের ট্র্যাক করে পৃথকীকরণের কাজ করতেন। তারপর সেই রোগীদের লালারসের নমুনা নিয়ে, ওষুধ দিয়ে ফেরার পরই আসত এসডিএম-এর ফোন। তাঁর পর্যালোচনা সভায় যোগ দিতে হবে। এমনকি, কোনও ডাক্তারবাবু কাজের জন্য ৩০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও, এই পর্যালোচনা সভার জন্য তাঁকে ওই ৩০ কিলোমিটার উজিয়ে আসতে হয়। আসাটা বাধ্যতামূলক। তারপর সেই সভায় ডাক্তারদদের প্রমাণ দিতে হয়, যে তাঁরা সত্যিই কাজ করেছেন। এর থেকেই ওই চিকিৎসকরা মনে করছেন, 'যেহেতু তাঁরা কাজ করছেন না, তাই কোভিড সংক্রমণ ছড়াচ্ছে', এইরকম একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের এই বিস্ফোরক অভিযোগের মুখে পরে উন্নাও-এর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, বিষয়টি শিঘ্রই সমাধান করা হবে। পদত্যাগী চিকিত্সকদের সঙ্গে জেলা প্রশান তো কথা বলছেই এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও তাঁদের সঙ্গে কথা চলছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর মতে, ওই চিকিৎসকরা তাঁদের 'দলেরই অংশ', অপরিচিত নন। তাই সমাধান পাওয়া যাবেই।
উন্নাও জেলায় বর্তমানে ১৯৮০ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। বুধবার এই জেলা থেকে ৮৪টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। তবে করোনাজনিত কারণে এদিন জেলায় কারোর মৃত্যু হয়নি। তবে এদিন এই জেলাতেই গঙ্গার ধারে বালির মধ্যে পোতা অবস্থায় সারি সারি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সেই মৃতদেহগুলি কোভিড রোগীদের বলেই অনেকের সন্দেহ। তাই করোনার প্রকৃত পরিসংখ্যানটা আরও ভয়ঙ্কর বলে মনে করা হচ্ছে।