সংক্ষিপ্ত
ভারতীয় সেনাও এতটা ভয় ধরাতে পারেনি
'অদৃশ্য শত্রু'র হাতেই বিধ্বস্ত মাওবাদী শিবিরগুলি
এই শত্রুর হাতেই মৃত্যু হয়েছে তাদের বেশ কয়েকজন বড় নেতার
দলে দলে শুরু হয়েছে আত্মসমর্পনের পালা
ভারতীয় সেনার বিশেষ বাহিনী যা করে দেখাতে পারেনি, তাই করে দেখাচ্ছে 'অদৃশ্য শত্রু'। ভারতীয় সেনার বন্দুক নয়, বর্তমানে তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশার জঙ্গল জুড়ে বিস্তৃত 'লাল করিডর'এ মাওবাদি জঙ্গিরা এখন কাঁপছে এই 'অদৃশ্য শত্রু'র ভয়ে। এই অদৃশ্য শত্রুর হাতেই মৃত্যু হয়েছে তাদের বেশ কয়েকজন বড় নেতার। আর তারপর থেকেই দলে দলে সদস্য মাওবাদি শিবিরগুলি ছাড়ছে, শুকরু হয়েছে আত্মসমর্পনের পালা। এই অদৃশ্য শত্রু আর কেউ নয়, করোনাভাইরাস।
গত ২৫ জুন, সিপিআই (মাওবাদী)-র তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটি জানিয়েছিল, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্য কমিটির সেক্রেটারি ইয়াপ্পা নারায়ণ ওরফে হরিভূষণ এবং ইন্দ্রাবতী অঞ্চল কমিটির সদস্য সিদ্ধাবোনা সারাক্কা ওরফে ভারতাক্কা, কোভিড-১৯'এর কারণে মারা গিয়েছে। দুজনেরই মৃত্যু হয়েছিল ছত্তিশগড়ের দক্ষিণে পামেদ-উসুর এলাকায়। কত বড় মাও নেতা ছিলেন এরা? হরিভূষণের মাথার দাম ছিল ৪০ লক্ষ টাকা, আর ভারতাক্কার ৮ লক্ষ টাকা।
তবে এই দুই নেতাই শুধু নয়, মাও দলে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিবেচিত গাদ্দাম মধুকর বা সোব্রাই কোভিডের চিকিত্সার জন্য তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গলে এসে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তার মৃত্যু হয়। একই ভাবে চিকিত্সার জন্য জঙ্গলের বাইরে আসা মাও নেতা গঙ্গাইয়া-কেও গ্রেফতার করা হয়েছিল, পরে তার মৃত্যু হয়।
করোনা পরীক্ষা হচ্ছে এক মাওবাদী নেত্রীর
শুধু এরাই নয়, কোভিডের কারণে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন মাওবাদি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের গোয়েন্দাদের। কোভিড আক্রান্ত কিংবা কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন হিডমা, বিনোদ, সোনু, নন্দু এবং জাইমন-এর মতো বড় মাপের মাওবাদী কমান্ডাররাও, এমনটাই খবর রয়েছে তাদের কাছে। সেইসঙ্গে আরও বহু মাও ক্যাডারদেরও কোভিডে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বস্তুত, কোভিডের প্রথম তরঙ্গের প্রভাব মাও শিবিরগুলিতে সেভাবে পড়েনি। কিন্তু, দ্বিতীয় তরঙ্গের অভিঘাতে একেবারে ছাড়খাড় অবস্থা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, কোভিডের প্রথম তরঙ্গ গ্রামাঞ্চলে সেভাবে আসেনি। কিন্তু, দ্বিতীয় তরঙ্গে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল কোভিড-১৯। বনাঞ্চলের নিকটবর্তী গ্রামগুলির সাথে মাওবাদীরা অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ থাকে। সেখান থেকেই মাওবাদী শিবিরগুলিতে পৌঁছনোর পথ খুঁজে পেয়েছে করোনাভাইরাস। কতটা খারাপ অবস্থা? নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাসে ৫৭ জন মাও সদস্য আত্মসমর্পণের করেছে, তার মধ্যে ১২ জনের দেহেই করোনা ধরা পড়েছে।
এই অবস্থায় দলে দলে মাওবাদিরা শিবির ছেড়ে এসে আত্মসমর্পনের রাস্তায় হাঁটছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এছাড়া আর উপায় নেই মাওবাদীদের। জঙ্গলের মধ্যে অক্সিজেন বা ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের মতো চিকিৎসা দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাই তারা চিকিত্সার জন্য বিশেষ করে তেলেঙ্গানায় পালাচ্ছে। মাওবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ ও চিকিত্সার জন্য শিবির ছেড়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীও।